মানুষের জীবন পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা অনবরত উৎপন্ন হচ্ছে এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ইন্দ্রিয় উত্তেজিত হচ্ছে এবং সেগুলি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছাচ্ছে, ফলে একই সঙ্গে মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের সংবেদন সৃষ্টি হচ্ছে। সংবেদনসমূহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

সংবেদনের বৈশিষ্ট্য
মানুষের জীবন পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা অনবরত উৎপন্ন হচ্ছে এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ইন্দ্রিয় উত্তেজিত হচ্ছে এবং সেগুলি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছাচ্ছে, ফলে একই সঙ্গে মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের সংবেদন সৃষ্টি হচ্ছে। সংবেদনসমূহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
উদ্দীপক নির্ভর: উদ্দীপক ছাড়া সংবেদন হয় না। উদ্দীপক প্রথমে ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপ্ত করে এবং সেই উদ্দীপনা স্নায়বিক শক্তিতে পরিণত হয়ে মস্তিষ্কে সংবেদন সৃষ্টি করে। সংবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি যে প্রতিক্রিয়া করে তাকে বলে আচরণ। শব্দ, আলো ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দীপক ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সংবেদন সৃষ্টি করে এবং তার ফলে ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের আচরণ লক্ষ করা যায়।
জানা প্রক্রিয়ার স্তর: কোন বস্তু বা ঘটনা বা ব্যক্তি ইত্যাদিকে জানার প্রথম স্তর হল সংবেদন।
মৌলিক অভিজ্ঞতা সংগ্রহের প্রক্রিয়া: সংবেদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মৌলিক অভিজ্ঞতার সমন্বয়ন ঘটে এবং একক বস্তুধর্মী অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।
উপাদান: সংবেদন হল পাঁচটি উপাদানের সমাহার। যেগুলি হল-উদ্দীপক, ইন্দ্রিয়, সংজ্ঞাবহ স্নায়ু, স্নায়ুকেন্দ্র ও প্রতিক্রিয়া।
বিভিন্ন ভৌত ঘটনা ও মানসিক প্রক্রিয়ার মিথস্ক্রিয়ার ফল: সংবেদন হল কোনো ভৌত ঘটনা ও মানসিক অবস্থার পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল। যেমন আলো, শব্দ, গন্ধ, রং ইত্যাদি হল ভৌত ঘটনা অপরপক্ষে দেখা, শোনা, অনুভূতি ইত্যাদি হল মানসিক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধরনের ভৌত ঘটনার ফলে অভিজ্ঞতা অর্জনের যে মানসিক প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয় তারই প্রাথমিক পর্যায় হল সংবেদন।
ব্যক্তি, বন্ধু বা ঘটনাকেন্দ্রিক: কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবেদন সৃষ্টি হয়। যেমন লাল রঙের একটি বস্তুকে দেখে আমাদের রং সম্বন্ধীয় সংবেদন সৃষ্টি হয়। আবার কোনো ঘটনা শুনে সেই ঘটনা সম্বন্ধে সংবেদন সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।
গুণস্থায়ী: সংবেদনের স্থায়িত্বকাল খুব কম। প্রত্যক্ষণ ও অনুভূতি সংবেদনের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যুক্ত হয়। যেমন- কোনোকিছু দেখা মাত্র তার অনুভূতির সঙ্গে সংবেদন মূহূর্তের মধ্যে যুক্ত হয় বলে আমরা সেই বস্তুর রং, আকৃতি, অবস্থান মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারি।
উপলব্ধিগত দিক: বাস্তব জীবনে মানুষ বিচ্ছিন্ন একক উদ্দীপকের সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ পায় না। ইন্দ্রিয়গুলি এত স্পর্শকাতর যে, পাশাপাশি সামান্যতম উদ্দীপনাতেও তা গ্রহণ করে, ফলে অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটে। সুতরাং সংবেদনকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না অর্থাৎ এককভাবে উপলব্ধি করা যায় না।
তীব্রতা: সংবেদনের তীব্রতা উদ্দীপকের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। উদ্দীপকের তীব্রতা বাড়লে সংবেদনের তীব্রতা বাড়বে। যেমন-তীব্র শব্দ হলে সেই সংবেদনও হবে তীব্র।
জ্ঞানের উপাদান: সংবেদন কোনো জ্ঞান নয়, জ্ঞানের উপাদান মাত্র।
সক্রিয়তা: সংবেদনে মনের সক্রিয়তা প্রয়োজন।
সংকেত প্রদান: সংবেদন সংকেত হিসেবে কাজ করে। পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রতি উপযোগী প্রতিক্রিয়া করার জন্য সংবেদন সংকেত প্রদান করে।
অভিযোজন: অভিযোজন সংবেদনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপকের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যথাযথ অভিযোজন হলে সংবেদন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে কার্যকরী হয়।
মননিরপেক্ষ: সংবেদন সর্বদা মননিরপেক্ষ অর্থাৎ সংবেদনকালে, মন নিষ্ক্রিয় থাকে। ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ বা অপছন্দের উপর সংবেদন নির্ভর করে না। ইন্দ্রিয়ের উপর বাইরের জগতের বস্তুসমূহ যে-সমস্ত ক্রিয়া করে মন সেগুলি কেবলমাত্র নিষ্ক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে।
ব্যক্তি নিরপেক্ষ: সংবেদন সৃষ্টির সময় মন নিষ্ক্রিয় থাকায় প্রত্যেক সংবেদনের উৎস হল বাইরের জগতের কোনো বস্তু বা ঘটনা। তাই এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজে কোনো সংবেদন ঘটায় না বরং ব্যক্তির মধ্যে সংবেদন ঘটে।
বিচ্ছিন্ন (Isolated) এবং নিরপেক্ষ স্নায়বিক অনুভূতিনির্ভর : সংবেদন হল আলাদা আলাদা তথ্য বা টুকরো খবরের সমষ্টি। যেমন কানের মাধ্যমে কোনো উত্তেজনা দেখা দিলে স্নায়বিক অনুভূতির সৃষ্টি হয় আবার চোখের মাধ্যমে বিভিন্ন উত্তেজনা গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্ত উদ্দীপনাগুলি মস্তিষ্কে গিয়ে একত্রিত হয়। আর এর ফলেই সংবেদন উৎপন্ন হয়। সুতরাং এই সমস্ত বিচ্ছিন্ন এবং নিরপেক্ষ স্নায়বিক অনুভূতিগুলির উপর সংবেদন নির্ভর করে।
সুতরাং সংবেদন হল দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়া। এটি জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ। আচরণ বিজ্ঞানে সংবেদনের যথেষ্ট গুরুত্ব থাকায় মনোবিজ্ঞানের এটি একটি বিশেষ শাখা হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই শাখাটি হল সংবেদন বিষয়ক মনোবিদ্যা।
আরও পড়ুন | Link |
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ১ | Click Here |
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ২ | Click Here |
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |