শিখন (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান | Shikhon Long Question Answer | Class 12 Semester 4th Education

১। শিখনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল- [1] জ্ঞানার্জন (Acquiring knowledge), [2] সংরক্ষণ বা ধারণ (Retention), [3] পুনরুদ্রেক (Recall) ও প্রত্যভিজ্ঞা (Recognition)। শিখনের এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে দেওয়া হল-
[1] জ্ঞানার্জন: শিখনের প্রথম স্তর হল জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন। কোনো ব্যক্তি প্রথাগত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই জ্ঞান বিভিন্নভাবে অর্জন করা যায়। ব্যক্তি বই পড়ে, শিক্ষক, অভিভাবক বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, যেমন-সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, যাত্রা, নাটক ইত্যাদির সাহায্যেও ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে।
[2] সংরক্ষণ বা ধারণ: শিখন বা অভিজ্ঞতাগুলিকে মনের মধ্যে ধরে রাখাকে সংরক্ষণ বলা হয়। সংরক্ষণের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব না হলেও, এর জন্য অনুকূল পরিস্থিতির উল্লেখ করা যায়। যেমন-
- [i] যে-কোনো বিষয় ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং বিষয়টিকে বারবার অনুশীলন করা।
- [ii] বিষয়টি যত সাম্প্রতিক হবে সংরক্ষণও তত ভালো হবে।
- [iii] বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকলে সংরক্ষণ উত্তম হয়।
- [iv] শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য উত্তম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন। অর্থপূর্ণ বিষয়, অনুশীলন, আগ্রহ, অতিশিখন, দেহ ও মনের সুস্থতা ইত্যাদি সংরক্ষণের সহায়ক। এ ছাড়াও ছন্দ সহকারে পাঠ, সংকেতের ব্যবহারের ফলেও সংরক্ষণের উন্নতি ঘটে।
[3] পুনরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞা: শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল পুনরুদ্রেক। সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাকে যদি ঠিক সময় ঠিক জায়গায় পুনরুদ্রেক করা না যায়, তাহলে শিখন সম্পূর্ণ হয় না। পূর্ব-অভিজ্ঞতাকে পুনরায় মনে করাকে পুনরুদ্রেক বলে। পুনরুদ্রেক প্রধানত দুই প্রকারের। যথা-
- [i] প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক: যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার ক্ষেত্রে কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাঁকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে।
- [ii] পরোক্ষ পূনরুদ্রেক: যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার জন্য তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে পরোক্ষ পুনরুদ্রেক বলে।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা পুনবুদ্রেক প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে তিনটি সূত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল-
- [i] সান্নিধ্যের সূত্র: পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে যখন একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়, তখন তাকে সান্নিধ্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রসগোল্লার কথা মনে আসলেই তার মিষ্টত্ব এবং রসের কথা মনে হয়।
- [ii] সাদৃশ্যের সূত্র: পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশি মিল থাকলে একটির কথা মনে হলেই অপরটির কথা মনে আসে। যেমন-রামায়ণের গল্পে লবের কথা মনে পড়লে কুশের কথাও মনে পড়বে।
- [iii] বৈসাদৃশ্যের সূত্র: বৈসাদৃশ্যও পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা সহজে আমাদের মনে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-আলোর কথা মনে হলেই অন্ধকারের কথা মনে হয়। রোগা লোকের কথা মোটা লোককে মনে করিয়ে দেয়।
প্রত্যভিজ্ঞা: প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বোধ যা না থাকলে
শিখনকে সফল বলা যায় না। প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির প্রকৃত অর্থ হল ‘চিনে নেওয়া’। পূর্বে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞা। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বোধ বা চেতনা, যার অভাব ঘটলে শিখন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।
২। শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী? শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করো।
শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক
শিখন ও পরিণমনের মধ্যে কতগুলি বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ করা যায়।
[1 ] বিকাশমূলক প্রক্রিয়া: শিখন ও পরিণমন-দুটিই বিকাশমূলক প্রক্রিয়া যার ফলে ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন ঘটে। শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে এই দুই প্রক্রিয়াই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুটি প্রক্রিয়া পরস্পর নির্ভরশীল।
[2] নির্ভরশীলতা: প্রক্রিয়া দুটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উভয়ই উভয়ের ওপর নির্ভরশীল। শিখনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল পরিণমন। যথাযথ পরিণমন ছাড়া শিখন অসম্ভব। পরিণমন প্রক্রিয়াটি শিখনের সীমারেখা নির্ধারণ করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিখনও পরিণমনের ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে, যেমন-দৈহিক অনুশীলন দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বলা যায়, শিখন এবং পরিণমন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং উভয়েই শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[3] মনোবিদদের অভিমত: মনোবিদরা পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখেছেন উপযুক্ত পরিণমন ঘটলেই শিশুর বিশেষ বিশেষ শিখন সম্ভব হয়। শারীরিক পরিবর্তন বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ নির্ধারণ করে শিশু কী শিখতে পারে এবং কতখানি শিখতে পারে। বাস্তবে দেখা গেছে, কোনো বিষয় শেখার জন্য শিশু যদি পরিণত বা প্রস্তুত না হয় এবং তাকে যদি জোর করে সেই বিষয় শেখানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে ফল বিপরীত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-দুই-তিন বছর বয়সের শিশুকে ভাষাসাহিত্য বিষয়ে পাঠদান করলে কিংবা জটিল অঙ্কের নিয়মকানুন শেখানোর চেষ্টা করলে তা কোনোদিনই সফল হবে না। তাই বলা যায়, পরিণমনই ঠিক করে শিশুর শিখনের সীমারেখা।
[4] শিক্ষাবিদদের অভিমত: শিক্ষাবিদদের মতে শিখন শুরু করার আগে তার পরিণমনের স্তর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত পরিণমন ঘটলে তবেই তার শিখনের কাজটি শুরু করা উচিত। শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে শিখনের ভূমিকাও অপরিসীম। এই কারণে অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, পরিণমন ও শিখন দুটি পরস্পরবিরোধী ধারণা নয়। বরং শিশুর সামগ্রিক বিকাশের জন দুটিই আবশ্যক।
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব
পরিণমন হল এক ধরনের জৈবিক প্রক্রিয়া, যা জীবকে তার বিকাশের একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এটি মূলত বংশগত বা জেনেটিক উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং পরিবেশের প্রভাব এতে কম। সহজ কথায়, কোনো কিছু শেখার জন্য শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত হওয়ার প্রক্রিয়াকেই পরিণমন বলা হয়। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে পরিণমন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কারণ এটি শিখনের ভিত্তি তৈরি করে। শিক্ষাক্ষেত্রে তথা শিখনের উপর পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করা হল-
[1] পরিণমন ও শিখনের সম্পর্ক: পরিণমন ও শিখন একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। পরিণমন হল শিখনের একটি পূর্বশর্ত। কোনো শিক্ষার্থী যখন কোনো কিছু শেখার জন্য শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়, তখন তার শিখন প্রক্রিয়া সহজ হয়। যেমন, কোনো শিশু যদি দৌড়ানোর জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত না হয়, তাহলে তাকে দৌড় শেখানো সম্ভব নয়। আবার কোনো জটিল গাণিতিক সমস্যাসমাধানের জন্য যদি তার মস্তিষ্কের বিকাশ না ঘটে, তাহলে সে তা শিখতে পারবে না। পরিণমন মানুষের মধ্যে সম্ভাবনা তৈরি করে, আর সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন হয়।
[2] শারীরিক পরিণমন ও শিখন: শারীরিক পরিণমন শিখনের জন্য একটি অপরিহার্য দিক। এটি একজন শিক্ষার্থীর পেশি, স্নায়ুতন্ত্র এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশের সঙ্গে জড়িত। পেশির সুসংবদ্ধ বিকাশ না হলে কোনো শারীরিক কাজ শেখা সম্ভব নয়। যেমন, হাতের পেশির বিকাশ না হলে লেখা বা আঁকা শেখা কঠিন। এ ছাড়া, মস্তিষ্কের এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ শিখনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্নায়ুকোষের সংযোগ তৈরি হওয়া এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের পরিণমন শিখনের গতি ও গুণগত মানকে প্রভাবিত করে। স্মৃতি, মনোযোগ এবং সমস্যাসমাধানের মতো উচ্চতর মানসিক দক্ষতা বিকাশের জন্য স্নায়বিক পরিণমন অপরিহার্য।
[3] মানসিক পরিণমন ও শিখন: শারীরিক পরিণমনের মতোই মানসিক পরিণমনও শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শিক্ষার্থীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক দক্ষতার বিকাশের জন্য অপরিহার্য। মনোবিজ্ঞানী জ্যাঁ পিঁয়াজে (Jean Piaget) তাঁর জ্ঞানীয় বিকাশের তত্ত্বে দেখিয়েছেন যে, শিশুরা বিভিন্ন স্তরের জ্ঞানীয় পরিণমনের মধ্য দিয়ে যায় এবং প্রতিটি স্তরে তাদের শেখার ধরন ও ক্ষমতা আলাদা হয়। কোনো নির্দিষ্ট স্তরের কাজ শেখার জন্য শিক্ষার্থীর সেই স্তরের জ্ঞানীয় পরিণমন আবশ্যক।
[4] পরিণমন ও পাঠক্রম প্রণয়ন: শিক্ষণের ক্ষেত্রে পরিণমনের ধারণাটি পাঠক্রম প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পাঠক্রম এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যা শিক্ষার্থীর বয়স এবং পরিণমনের স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন ধরনের পাঠক্রম তৈরি করা হয়। যেমন-প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য খেলার ছলে বর্ণমালা শেখানো হয়। কারণ এই বয়সে তাদের পেশি এবং মানসিক পরিণমন লেখালেখি শেখার জন্য যথেষ্ট নয়। উচ্চতর শ্রেণিতে জটিল বিষয় যেমন, বিজ্ঞান বা বীজগণিত শেখানো হয়, কারণ সেই বয়সে তাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতা যথেষ্ট বিকশিত হয়।
[5] পরিণমন ও বৌদ্ধিক ক্ষমতার বিকাশ: পরিণমনের ফলে শিশুর চিন্তা, যুক্তি ও সমস্যাসমাধানের ক্ষমতা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়। শিক্ষককে এই ধাপগুলি বিবেচনা করে পাঠ পরিচালনা করতে হয়।
[6] আবেগীয় পরিণমন ও শিক্ষা: আবেগীয় পরিণমন শিক্ষার্থীর আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহযোগিতার মানসিকতা ও দলগত কাজ শেখার ক্ষমতা বাড়ায়। ছোটো শিশুরা আবেগে বেশি প্রভাবিত হয়, কিন্তু বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখে।
[7] সামাজিক পরিণমন ও শিক্ষা: শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিকতা গড়ে ওঠে, তবে তার ভিত্তি হল সামাজিক পরিণমন। পরিণমনের মাধ্যমে শিশু সামাজিক নিয়মকানুন বুঝতে পারে এবং বিদ্যালয় পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
[৪] ব্যক্তিভেদ ও পরিণমন: সব শিশুর পরিণমনের গতি সমান নয়; কারও বিকাশ দ্রুত হয়, কারও একটু ধীরে। শিক্ষক এই বৈচিত্র্যকে বুঝে শিক্ষাদান করলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সম্ভব হয়।
[9] শিক্ষা ব্যর্থতার প্রতিকারে পরিণমন: অনেক সময় শিক্ষার্থী যদি নির্দিষ্ট পাঠে ব্যর্থ হয়, তবে তার অন্যতম কারণ হতে পারে পরিণমনের অভাব। শিক্ষক যদি এটি বুঝতে পারেন, তবে শিশুর প্রতি অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না।
[10] মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিণমন: পরিণমনকে উপেক্ষা করে অতিরিক্ত চাপ দিলে শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব মানসিক সুস্থতার সাথেও গভীরভাবে জড়িত।
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমন এমন এক মৌলিক ভিত্তি, যার উপর সমগ্র শিক্ষা প্রক্রিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে। শারীরিক, মানসিক, আবেগীয়, সামাজিক ও বৌদ্ধিক দিকের স্বাভাবিক বিকাশ ছাড়া শিক্ষা কখনও সফল হতে পারে না। তাই শিক্ষককে অবশ্যই পরিণমনের ধাপ ও সীমাবদ্ধতাকে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীর উপযোগী পাঠক্রম ও শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
৩। সামাজিক প্রেষণা কী? যে-কোনো ছয়প্রকার সামাজিক প্রেষণা ‘সম্পর্কে আলোচনা করো।
সামাজিক প্রেষণা
মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা, ভালোবাসা, খ্যাতির স্পৃহা প্রভৃতি সামাজিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যে সকল প্রেষণা জাগ্রত হয়, তাদের সামাজিক প্রেষণা বলে। সামাজিক প্রেষণা ব্যক্তির সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছয়প্রকার সামাজিক প্রেষণার বর্ণনা
এখানে ছয় প্রকার সামাজিক প্রেষণার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হল-
[1] খ্যাতি (Fame): খ্যাতি মানুষকে অত্যধিক পরিশ্রমী করে তোলে। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়, যারা পদমর্যাদার উচ্চ আসনে পৌঁছোনোর জন্য অধিক পরিশ্রম করতে দ্বিধা করেন না। খ্যাতি বা পদমর্যাদা ব্যাপারটি অনেকাংশে নির্ভর করে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও তার পরিবেশের ওপর।
[2] যূথচারিতা (Gregariousness): যুথচারিতা প্রেষণাটি মানুষ-সহ অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও দেখা যায়। প্রায় সকল প্রাণীই নিজ নিজ দলের প্রাণীদের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে থাকতে চায়। প্রাণীদের এইপ্রকার ইচ্ছাকে যূথচারিতা বলে। যুথচারিতা একটি অর্জিত প্রেষণা। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার এবং পরিবেশ থেকে এই প্রেষণাটি অর্জন করে।
[3] নিরাপত্তা (Security): নিরাপত্তাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেষণা। শিশু তার বাবা-মা বা বয়স্কদের কাছ থেকে দৈহিক নিরাপত্তা চায়। নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র, জল, বায়ু প্রভৃতি শিশুর দৈহিক নিরাপত্তামূলক প্রেষণা। মানুষ তার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং শত্রুর আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করে, বাড়ির চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করে। দৈনন্দিন জীবনেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
[4] স্বীকৃতি (Approval): প্রায় সকল মানুষই তার নিজের সম্পর্কে অন্যান্যদের কাছ থেকে একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থায় তার কর্মের স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে। কোনো বিষয়ে স্বীকৃতি পেলে, ব্যক্তির মধ্যে সেই বিষয়ে আরও বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা জেগে ওঠে।
[5] সাফল্য (Achievement): মানুষ কেবলমাত্র খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে চায় না। সে সমাজে নিজেকে ভালো করে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এইরূপ ইচ্ছাকে সাফল্য প্রেষণা বা কৃতি প্রেষণা বলে। সাফল্য লাভের ইচ্ছা মানুষকে অধিক পরিশ্রমী হতে সাহায্য করে।
[6] আক্রমণধর্মিতা (Aggression Motive): একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেষণা হল আক্রমণাত্মক প্রেষণা। এই প্রেষণাটি অন্য ব্যক্তির সাফল্যের ক্ষেত্রে বাধা প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। কোনো ব্যক্তি যখন তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়, তখন তার মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ লক্ষ করা যায়।
৪। প্রেষণা হ্রাসের কারণগুলি চিহ্নিত করো।
প্রেষণা হ্রাসের কারণ
মনোবিদগণ প্রেষণা হ্রাসের অনেকগুলি কারণ চিহ্নিত করেছেন। নীচে প্রেষণা হ্রাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হল-
[1] উদ্বেগ: প্রেষণা হ্রাসের অন্যতম কারণ উদ্বেগ। কোনো ব্যক্তির মধ্যে যদি কোনো বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, তবে তা ব্যক্তির প্রেষণার ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। উদ্বেগের ফলে বহুক্ষেত্রে প্রেষণা বা প্রেষণক্রিয়া হ্রাস পায়।
[2] বিষয়ের কাঠিন্য: বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে, যদি কোনো বিষয় খুব কঠিন হয় অথবা খুব সহজ হয়, তাহলেও ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর প্রেষণা হ্রাস পায়।
[3] উৎসাহ বা আগ্রহ: প্রেষণার সাথে আগ্রহের নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান। কোনো বিষয়বস্তুর প্রতি ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর উৎসাহ বা আগ্রহ কম হলে ওই বিষয়বস্তুর প্রতি তার প্রেষণা হ্রাস পায়।
[4] কৌতূহলের অভাব: কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে যদি ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর কৌতূহল না থাকে তাহলে সে ওই বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থী অনুৎসাহী হয়ে পড়ে। ফলে তার মধ্যে বিষয়ের প্রতি প্রেষণা হ্রাস পায়।
[5] অতি-অসহায়ত্ব: মনোবিদরা বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, কোনো শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি যদি কোনো কাজে বারে বারে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই কাজের প্রতি তার উৎসাহ নষ্ট হয়, ব্যর্থতার দরুন তার মধ্যে এক অসহায়তার সৃষ্টি হয়। ফলে তার প্রেষণা হ্রাস পায়।
[6] প্রক্ষোভ বা আবেগ: লজ্জা, ঘৃণা, ভয় প্রভৃতি প্রক্ষোভগুলি ব্যক্তির প্রেষণার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এই-জাতীয় আবেগ বা প্রক্ষোভের ফলে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পায়।
[7] মানসিক দুর্বলতা: মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে বহু ব্যক্তি পরিবেশ অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। অনেক সময় তারা নিজেদের দুর্বলতাগুলিকে বড়ো করে দেখে। সামান্য বাধাকেও তারা অতিক্রম করতে পারে না। ফলে এই কাজে তারা প্রেষণা হারায়।
[৪] পরিবেশ: কাজের পরিবেশ যথোপযুক্ত না হলেও ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী কাজের প্রতি প্রেষণা হারায়। পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতা, দলগত উৎসাহ, সহমর্মিতার অভাবে বহু ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কাজে প্রেষণা হারায়।
[9] চাহিদাপূরণ না হওয়া: বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হলে ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট কাজে প্রেষণা হারায়। যেমন-খাদ্য, পানীয় প্রভৃতির চাহিদাপূরণ না হলে ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণা হ্রাস পায়।
[10 ] নিরাপত্তার অভাব: প্রতিটি ব্যক্তির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল নিরাপত্তা। সুরক্ষা, স্থায়িত্ব, ভয় থেকে মুক্তি প্রভৃতি নিরাপত্তামূলক চাহিদাগুলি সঠিকভাবে পূরণ করা না হলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পায়।
[11] আত্মসম্মানের চাহিদাপূরণ না হওয়া: ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত মাত্রায় আত্মসম্মানবোধ তৈরি না হলে বিভিন্ন কাজে প্রেষণার ঘাটতি লক্ষ করা যায়।
[12] আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদাপূরণ না হওয়া: প্রত্যেক ব্যক্তিই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চায়। কোনো কারণে এই কাজে বিফল হলে ব্যক্তি নিজেকে সংকুচিত করে ফেলে। ফলে তার প্রেষণা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে পরবর্তী কাজে অগ্রসর হওয়ার প্রেষণা হারায়।
৫। বিস্মৃতি বা বিস্মরণ কী? বিস্মরণের কারণগুলি আলোচনা করো।
বিস্মৃতি বা বিস্মরণ
স্মৃতির অভাবকেই বিস্মৃতি বা বিস্মরণ বলা হয়। বিস্মৃতি বা ভুলে যাওয়া হল মনে রাখার বিপরীত। স্মৃতি হল শিখন, সংরক্ষণ, মনে করা এবং চেনা এই কয়েকটি মানসিক প্রক্রিয়ার সম্মিলিত রূপ। এই জটিল ক্রিয়া কোনো কারণে ব্যাহত হলে বিস্মৃতি দেখা দেয়।
কয়েকজন বিখ্যাত মনোবিদ বিস্মরণের কিছু সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন-
মান (Munn) প্রদত্ত সংজ্ঞা: পূর্বার্জিত কোনো বিষয়কে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে স্মরণ করার অক্ষমতাকেই বিস্মৃতি বলা হয়।
ড্রেভার (Drever) প্রদত্ত সংজ্ঞা: কোনো সময়ে কোনো অভিজ্ঞতা বা পূর্বার্জিত কোনো কাজ পুনরায় সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়াকেই বিস্মৃতি বলে।
ভাটিয়া (Bhatia) প্রদত্ত সংজ্ঞা: মূল উদ্দীপকের সাহায্য ব্যতীত কোনো ভাবনা বা ভাবনা-গুলিকে চেতন মনে নিয়ে আসার ব্যর্থতাই হল বিস্মৃতি।
বিস্মরণের কারণ
[1] চর্চার অভাব: অনভ্যাসে বিদ্যাহ্রাস-কথাটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনো কিছু শেখার পর দীর্ঘদিন চর্চা না করলে তার বিস্মরণ ঘটে।
[2 ] বিষয়বস্তুর প্রকৃতি: বিষয়বস্তুর প্রকৃতির ওপর মনে রাখা বা ভুলে যাওয়া অনেকখানি নির্ভর করে। এবিংহাউসের পরীক্ষা থেকে জানা যায়, অর্থহীন শব্দতালিকা, অর্থযুক্ত শব্দতালিকা, সম্পূর্ণ বাক্য ইত্যাদি বিষয়বস্তুর মধ্যে অর্থহীন শব্দতালিকার ক্ষেত্রে বিস্মরণের হার সবচেয়ে বেশি।
[3] শিখনের মাত্রা: প্রত্যেক বিষয় শেখার একটা মাত্রা আছে যেখানে পৌঁছোলে শিখন সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে শেখার পরেও যদি চর্চা করা হয় তাহলে তাকে অতিশিখন বলা হয়। অতিশিখনের ক্ষেত্রে বিস্মরণ কম ঘটে।
[4] অবদমন: ফ্রয়েড বলেন, অবদমন হল বিস্মরণের মূল কারণ। যা আমরা চাই না, যা অসামাজিক বা আমাদের কাছে অপ্রিয় তাকে আমরা অবদমন অর্থাৎ, ভুলে যেতে চাই।
[5] পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ: কোনো বিষয় ভালোভাবে শেখার আগে যদি অন্য কোনো সদৃশ বিষয়বস্তু শিখতে যাই, তবে দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথমে শেখা বিষয়টির কিছু অংশ ভুলিয়ে দেয়। এই মানসিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ। পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ বিস্মরণের অন্যতম কারণ।
[6] নেশাকারক বন্ধু: দীর্ঘদিন ধরে নেশার বস্তু ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের স্মরণচিহ্ন অস্পষ্ট হয়ে যায় এবং বিস্মৃতি ঘটে।
[7] আবেগজনিত প্রতিরোধ: তীব্র আবেগমূলক পরিস্থিতিতে খুব ভালো করে শেখা বিষয়গুলিকেও মনে করতে কষ্ট হয়। ভয়, রাগ, দুঃখ, লজ্জা ইত্যাদি প্রক্ষোভ তীব্রমাত্রায় দেখা দিলে বিস্মরণের মাত্রা বেড়ে যায়।
[৪] পরিবর্তিত পরিবেশ: যে পরিবেশে আমরা শিখে থাকি, সেই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলি স্মরণে সহায়ক হয়। বাড়িতে ভালো করে তৈরি প্রশ্নোত্তর পরীক্ষার হলে আমরা অনেকসময় ভুলে যাই।
[9 ] আঘাতজনিত বিস্মরণ: আমরা জানি, সংরক্ষণ নির্ভর করে মস্তিষ্কের ওপর। মস্তিষ্কে কোনো কারণে গুরুতর আঘাত লাগলে সাময়িকভাবে স্মৃতি নষ্ট হয়।
[10] তীব্র শোক: তীব্র শোকের ফলে ব্যক্তির স্মৃতি সম্পূর্ণ লোপ পায়। এই স্মৃতিলোপকে বলা হয় ‘অ্যামনেশিয়া’।
যেসব অবস্থা ধারণ বা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, সেগুলির বিপরীত অবস্থা বিস্মৃতি আনে। তাই সংরক্ষণ, শিখন এবং অভ্যাস বাড়ালে বিস্মৃতি কমে।
৬। শিশুদের মধ্যে কল্পনা বিকাশের উপায়গুলি লেখো।
শিশুদের মধ্যে কল্পনা বিকাশের উপায়
কল্পনা একটি শক্তিশালী মানসিক প্রক্রিয়া, যা শিশুদের সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। শিশুর কল্পনাশক্তি উন্নত করতে, কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে, যেগুলি তাদের মেধার বিকাশে সহায়ক হতে পারে। নীচে কিছু উপায় উল্লেখ করা হল-
[1] গল্প শোনা এবং গল্প বলা: শিশুদের কল্পনাশক্তি উন্নত করতে গল্প শোনানো এবং তাদের গল্প বলা শেখানো অত্যন্ত কার্যকর। গল্পের মধ্যে নানারকম চরিত্র, ঘটনা এবং পরিস্থিতি থাকে, যা শিশুকে কল্পনা করতে সাহায্য করে। শিশুদের প্রতিদিন একটি নতুন গল্প শোনালে তারা গল্পের চরিত্র ও ঘটনা কল্পনা করতে পারে, যা তাদের চিন্তাশক্তি এবং সৃজনশীলতা বাড়ায়।
[2] বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ: খেলাধুলা ও সৃজনশীল গেমস শিশুর কল্পনাশক্তি বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত, যেখানে তারা নতুন নতুন পরিস্থিতি এবং চরিত্র কল্পনা করতে পারে। ব্লক দিয়ে বাড়ি তৈরি করা বা সাজানোর খেলা, রোল প্লে গেমস (যেমন-ডাক্তারের খেলা) শিশুদের কল্পনাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
[3] ছবি আঁকা ও সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ: শিশুদের ছবি আঁকা এবং সৃজনশীল অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে, তাদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি তাদের চিন্তাভাবনা এবং নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশে সহায়তা করে। শিশুদের ছবি আঁকতে দেওয়া, যেখানে তারা কল্পনা করে একটি দৃশ্য বা চরিত্র তৈরি করে, তাদের কল্পনাশক্তি বিকশিত হয়।
[4] প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে সময় কাটানো: প্রকৃতির মধ্যে শিশুদের জন্য নানা ধরনের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা লুকিয়ে থাকে। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান (পশুপাখি, গাছপালা, প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুলফল ইত্যাদি)-এর সঙ্গে সময় কাটালে, শিশুদের কল্পনা বিকশিত হয়, কারণ তারা পরিবেশ, পশুপাখি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্পর্কে ভাবতে শেখে। বাগানের গাছপালা, ফুল, পাখি বা আকাশের পরিবর্তন দেখে শিশুদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা নতুন কিছু চিন্তা করতে শেখে।
[5] সিনেমা, কার্টুন বা অ্যানিমেশন দেখা: শিশুদের জন্য নির্মিত সিনেমা, কার্টুন বা অ্যানিমেশন তাদের কল্পনাশক্তি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। এই ধরনের ভিস্যুয়াল মিডিয়া তাদের কল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সাহায্য করে। একাধিক কাল্পনিক চরিত্র বা রঙিন দৃশ্য দেখা শিশুর কল্পনাশক্তি বাড়িয়ে দেয়, কারণ তারা নিজেরাই সেই দৃশ্যগুলি কল্পনা করতে পারে।
মন্তব্য
শিশুদের মধ্যে কল্পনাশক্তি বিকাশের জন্য ওপরে উল্লিখিত উপায়গুলি অত্যন্ত কার্যকরী। কল্পনা শুধু শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক নয়, এটি তাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং আবেগিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই – উপায়গুলি শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যতের সৃজনশীল চিন্তা এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে।
৭। মনোযোগের শর্ত বা নির্ধারকগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, মনোযোগের শর্তগুলি কী কী?
মনোযোগের শর্ত বা নির্ধারকসমূহ
মনোযোগের শর্তগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল-
[1] বন্ধুগত নির্ধারক: বস্তু বা উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্যই যখন ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করে, তখন তাকে বস্তুগত নির্ধারক বলা হয়। এখানে নির্ধারক ব্যক্তিনিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। বস্তুগত নির্ধারকগুলির মধ্যে রয়েছে-
- [i] তীব্রতা: তীব্র আলো, প্রচণ্ড শব্দ, গাঢ় রং ইত্যাদি আমাদের মনকে জোর করে আকর্ষণ করে।
- [ii] বিস্তৃতি: উদ্দীপকের বিস্তৃতি আমাদের মনোযোগকে আকর্ষণ করে। অস্বাভাবিক দীর্ঘ বা খর্ব কিংবা বেজায় স্থূলকায় ব্যক্তির প্রতি আমাদের মনোযোগ সহজেই চলে যায়।
- [iii] পুনরাবৃত্তি: পুনরাবৃত্তি মনোযোগের অন্যতম বস্তুগত নির্ধারক। ‘সাহায্য করো’ কথাটি একবার উচ্চারিত হলে, আমরা মনোযোগ দিতে নাও পারি, কিন্তু ওই কথাটি বারবার উচ্চারিত হলে আমরা মনোযোগ না দিয়ে পারি না।
- [iv] অভিনবত্ব: অভিনব কোনো বস্তুর প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষিত হয়। যেমন-নতুন ধরনের পোশাক-পরা ব্যক্তি সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
- [v] গতিশীলতা: উদ্দীপকের গতিশীলতা মনোযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত নির্ধারক। অনেক সময় বিজ্ঞাপনদাতারা তাঁদের বিজ্ঞাপনটি চলমান করে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
- [vi] স্পষ্টতা: উদ্দীপকের স্পষ্টতা মনোযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত নির্ধারক। পরিষ্কার হাতের লেখার প্রতি আমরা মনোযোগী হই।
- [vii] বৈপরীত্য বা পার্থক্য: একটি দীর্ঘকায় ব্যক্তির পাশে খর্বকায় ব্যক্তি বা একটি স্থূলকায় ব্যক্তির পাশে যদি একটি শীর্ণকায় ব্যক্তি থাকে, সহজেই সেই দিকে আমাদের মনোযোগ চলে যায়।
- [viii] বিশেষ অবস্থিতি: কোনো বস্তুর বিশেষ অবস্থিতির জন্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। পত্রিকার নীচের অংশের থেকে ওপরের অংশের দিকে আমাদের দৃষ্টি আগে পড়ে।
- [ix] রং: সাদা-কালো লেখার মধ্যে যদি রঙিন লেখা থাকে, তখন রঙিন লেখার প্রতি আমাদের দৃষ্টি প্রথমেই চলে যায়।
- [x] উদ্দীপকের স্থায়িত্ব বা দীর্ঘ সময়: উদ্দীপক অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হলে আমাদের মনোযোগ এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হলে আমরা মনোযোগ দিতে বাধ্য হই।
[2] ব্যক্তিগত নির্ধারক: মনোযোগ যখন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যের দ্বারা নির্ধারিত হয় তখন তাকে ব্যক্তিগত নির্ধারক বলে। এই ধরনের নির্ধারকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- [i] আগ্রহ: ম্যাকডুগাল-এর মতে, আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ এবং মনোযোগ হল সক্রিয় অনুরাগ। আগ্রহ ও মনোযোগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান।
- [ii] চাহিদাপূরণ: খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্যবস্তুর প্রতি আমরা মনোযোগ দিই। কোনো বিষয়ে জ্ঞানের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সেই বিষয়ের বইয়ে মনোযোগী হই।
- [iii] অভ্যাস: অভ্যাস মনোযোগের অন্যতম ব্যক্তিগত নির্ধারক। ঘুম থেকে উঠে যাদের খবরের কাগজ পড়া অভ্যাস, তারা যতক্ষণ না খবরের কাগজ পড়তে পারে ততক্ষণ অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে না।
- [iv] সেন্টিমেন্ট: সেন্টিমেন্ট এক ধরনের মানসিক সত্তা যা কোনো ব্যক্তি, ঘটনা, বস্তু বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা, ধর্মের প্রতি বিশ্বাস প্রভৃতি সেন্টিমেন্টের উদাহরণ। যে বিষয় বা বস্তুকে কেন্দ্র করে সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে, তার প্রতি আমরা মনোযোগী হই।
- [v] মনঃপ্রকৃতি: বিশেষ ধরনের মনঃপ্রকৃতির অধিকারী ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ ঘটনার প্রতি আকৃষ্ট হয়। স্বাভাবিকভাবেই তার সেই দিকেই মনোযোগ দিতে ইচ্ছা হয়।
- [vi ] শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা: দর্শনীয় কোনো জায়গায় বেড়াতে গিয়ে ইতিহাসবিদদের দৃষ্টি ঐতিহাসিক বস্তুর দিকে থাকে। ভূতত্ত্ববিদদের কাছে শিলার প্রকৃতি গুরুত্ব পায়। শিল্পরসিকের শিল্পের অভিনবত্বের ওপর নজর পড়ে। মনোযোগের এই রকম বিভিন্নতার কারণ ব্যক্তির শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা।
- [vii] প্রবণতা: ব্যক্তিভেদে প্রবণতার পার্থক্য দেখা যায়। ব্যক্তির নির্দিষ্ট দিকে প্রবণতা মনোযোগের ব্যক্তিগত নির্ধারক। যার সংগীতে প্রবণতা আছে, সে সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
- [viii] কৌতূহল: দৈনন্দিন চলার পথে আমরা অনেক ঘটনার মুখোমুখি হই। অধিকাংশ মানুষই বেশিরভাগ ঘটনার প্রতি মনোযোগী হয় না। কিন্তু যারা কৌতূহলী তারা যতটা সম্ভব বেশিসংখ্যক ঘটনার প্রতি মনোযোগ দেয়।
[3] শারীরিক বা দৈহিক শর্ত বা কারণ: মনোযোগের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও অন্যতম শর্ত হিসেবে কাজ করে। যদিও শারীরিক শর্তগুলি সঠিক অর্থে মনোযোগের শর্ত নয়, তবুও তা মনঃসংযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন-
[i] জ্ঞানেন্দ্রিয়সমূহকে নিবদ্ধ করা: মনোযোগের বিষয়বস্তুর প্রতি জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিকে নিবদ্ধ করতে হয়। যেমন-চোখ বা কানকে সজাগ করা।
[ii] শারীরিক পরিবর্তন: মনোযোগ দেওয়ার জন্য আমরা শারীরিক অঙ্গ, পেশি বা ইন্দ্রিয়ের পরিবর্তন ঘটাই। যেমন-মনোযোগের বস্তুর দিকে আমরা মাথা হেলাই।
[iii] দেহের বিশেষ ভঙ্গিমা: মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনেকের মধ্যে বিশেষ ধরনের দেহভঙ্গিমা দেখা যায়। যেমন-বহু শিল্পী মনোযোগ দিয়ে গান গাওয়ার সময়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন।
[iv] ব্যক্তিগত অভ্যাস: বহু ব্যক্তি বিশেষ কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিলে পা নাচাতে থাকেন। পা নাচানো বন্ধ করলেই তাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
৯। মনোযোগ আকর্ষণের উপায় লেখো। মনোযোগের কয়েকটি বিকর্ষক উল্লেখ করো। শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা লেখো।
মনোযোগ আকর্ষণের উপায়
মনোযোগ আকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলি হল-
[1] শান্ত পরিবেশ: কোলাহলমুক্ত শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যালয় স্থাপিত হলে পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সহজে আকৃষ্ট হয়।
[2] বিশ্রামের ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করার জন্য সময়সূচিতে মনোবিজ্ঞানসম্মতভাবে বিভিন্ন বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মাঝে মাঝে বিশ্রামের ব্যবস্থা করাও একান্তই বাঞ্ছনীয়।
[3] শিক্ষাব্যবস্থার বৈচিত্র্যকরণ: পাঠক্রমকে কেবলমাত্র গ্রন্থকেন্দ্রিক না করে বিচিত্র ও বহুমুখী করে তুলতে হবে। ক্রীড়া ও কর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের বিচিত্র বিষয়ে রুচি ও অনুরাগ তৈরি হয়।
[4] দৃষ্টি ও শ্রুতিনির্ভর শিক্ষার ব্যবস্থা: শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বা অনুরাগকে ক্রিয়াশীল করতে হলে, পাঠদানকালে দৃষ্টিনির্ভর ও শ্রুতিনির্ভর শিক্ষার উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও পাঠদানকালে মনোযোগের নির্ধারকগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
[5] জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা: দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটালে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
[6] উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্টতা: শিক্ষার উদ্দেশ্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
মনোযোগের বিকর্ষক
মনোযোগে বাধাপ্রদানকারী বিষয়গুলিকে মনোযোগের বিকর্ষক বলা হয়। এখানে কয়েকটি বিকর্ষকের উল্লেখ করা হল-
- [1] দুশ্চিন্তা, অহেতুক ভয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মনোযোগ নষ্ট করে দেয়।
- [2] বাহ্যিক উদ্দীপক, যেমন-অতি জোর শব্দ, কানের কাছে অনেকক্ষণ ধরে ধ্বনিত হওয়া যে-কোনো শব্দ মনোযোগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে।
- [3] বিভিন্ন প্রকার অভাববোধ, চাহিদা, অতৃপ্ত বাসনা আমাদের মনোযোগে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- [4] বিভিন্ন প্রকার প্রতিকূল পরিবেশ, শারীরিক অসুস্থতা মনোযোগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে।
- [5] পরিকল্পনার অভাব, শৃঙ্খলাহীন অবস্থা, ইচ্ছার অভাবও মনোযোগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে।
মন্তব্য
ছাত্রছাত্রীদের পাঠে মনোযোগী হওয়ার জন্য যতদূর সম্ভব অনুকূল পরিবেশ গঠন করতে হবে এবং বিকর্ষকগুলিকে দূর করতে হবে। ইচ্ছা বা প্রেষণাকে উদ্দীপিত করতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে এবং যথাসম্ভব শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে পারবে।
শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা
শিক্ষার সঙ্গে মনোযোগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শিখনের একটা বড়ো সমস্যা হল শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করা। এ ব্যাপারে মনোবিদরা কয়েকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন-
[1] মনোযোগ আকর্ষণকারী কৌশল: ব্যক্তিজীবনে মনোযোগের রূপ এক থাকে না। শৈশবকালে ব্যক্তিনিরপেক্ষ মনোযোগের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্তরে বস্তুর বৈশিষ্ট্যই মনোযোগের নির্ধারক। চাহিদাকে কেন্দ্র করে শিশুর শিখনকে বিন্যস্ত করতে হবে। শিশুর চাহিদা হল খেলা। তাই শিশুর পাঠক্রম হবে ক্রীড়াভিত্তিক এবং শিখনপদ্ধতি হবে ক্রীড়াকেন্দ্রিক।
[2] ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল: পরবর্তী স্তরে ইচ্ছাসাপেক্ষে মনোযোগ দেখা যায়। এই সময় শিখনের উদ্দেশ্য ও ব্যাবহারিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করে, সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে, উপদেশ দিয়ে, প্রয়োজনে লঘু শাসন ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।
[3] পরিসর অনতিক্রম্য কৌশল: বিষয়বস্তু নির্বাচনে শিক্ষককে লক্ষ রাখতে হবে তা যেন শিক্ষার্থীর মনোযোগের পরিসর অতিক্রম না করে। প্রয়োজন হলে বড়ো ও জটিল বাক্যকে ছোটো সরল বাক্যে পরিণত করতে হবে।
[4] নির্ধারক প্রয়োগ কৌশল: মনোযোগের নির্ধারকগুলিকে প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করতে হবে। তীব্রতা, স্পষ্টতা, নতুনত্ব, পুনরাবৃত্তি প্রভৃতি মনোযোগের বস্তুগত নির্ধারকগুলিকে শিখনীয় বিষয়গুলির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
[5] বিষয়-বৈচিত্র্য প্রয়োগ কৌশল: মনোযোগের পরিবর্তন- শীলতা ও চঞ্চলতা সম্পর্কে শিক্ষক সচেতন হবেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা না করে, মাঝে মাঝে তিনি অন্য বিষয়ে চলে যাবেন।
মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায়, মনোযোগ পঠনপাঠনের প্রথম ও প্রধান শর্ত। তাই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে লিখিত ও অলিখিত সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে, যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক মনোযোগ সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস চতুর্থ সেমিস্টার সব অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর