রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন

Table of Contents

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন

১। স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের আদর্শ কী তা আলোচনা করো।

কর্মযোগ গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে স্বামী বিবেকানন্দ কর্মযোগের আদর্শ নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্বামীজি বলেন নিজের চিন্তা না করে অহংকে ত্যাগ করে পরের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করাই হল কর্মযোগ। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বর্ণিত কর্মযোগ ও নিষ্কাম কর্মের ধারণার দ্বারা বিবেকানন্দ বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন।

কর্মের মূল্য ও নিঃস্বার্থপরতা: স্বামীজি কর্মযোগের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। একটি হল কর্মের মূল্য ও গুরুত্ব এবং অপরটি হল নিঃস্বার্থপরতা। মুক্তি পেতে গেলে আমাদের প্রথম কাজ হল স্বার্থপরতার জাল ছিন্ন করা। তিনি বলেন নিঃস্বার্থ কর্ম দ্বারা মুক্তিলাভই হল কর্মযোগের আদর্শ।

মানুষের পরম লক্ষ্য প্রাপ্তি: স্বামীজির মতে কর্মযোগ হল নৈতিকতা ও ধর্মের এমন এক যোগসূত্র যা পরের উপকার এবং শুভ কর্মের মাধ্যমে মোক্ষ প্রাপ্তিতে সাহায্য করে। সুতরাং নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে মানুষের জীবনের পরম লক্ষ্য বা মোক্ষ লাভ করাকে বলা হয় কর্মযোগ।

কর্মই ধর্ম: স্বামী বিবেকানন্দ মনে করতেন কর্মই মানুষের ধর্ম। প্রতিটি মানুষের উচিত তার নিজের কর্মকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কর্ম সম্পাদন করা। তাঁর মতে যেসকল কর্ম আমাদের ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায় সেগুলি হল সৎকর্ম। আর এই সৎকর্মগুলিই হল কর্তব্যকর্ম।

গীতার নিষ্কাম কর্ম: স্বামী বিবেকানন্দ গীতায় নিষ্কাম কর্মযোগের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। গীতায় বলা হয়েছে ব্যক্তির শুধুমাত্র কর্মে অধিকার আছে, কিন্তু কর্মফলে কোনো অধিকার নেই। এখানে কর্মযোগীকে কর্মফলের আশা না করে কেবল নিমিত্ত কর্তা হিসেবে, নিষ্কাম কর্ম করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।

জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় : কর্মযোগ শুধু কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জ্ঞান এবং ভক্তিরও সমন্বয় প্রয়োজন। জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথে চালিত করে এবং ভক্তি ঈশ্বরের প্রতি প্রেম জাগ্রত করে।

স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের এই আদর্শগুলি মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

২। কর্মযোগ বলতে কী বোঝায়? বিবেকানন্দ তাঁর কর্মযোগের ভাবনায় নিষ্কাম কর্মের স্বরূপ কীভাবে নির্দেশ করেছেন?

কর্মযোগ: স্বামী বিবেকানন্দের দর্শনে কর্মযোগ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ‘কর্ম’ শব্দটি ক + মন্ প্রত্যয় যোগে-কাজ করাকে বোঝায়। স্বামীজি ‘কর্ম’ অর্থে ‘কর্মফলসমেত কর্ম’ বুঝিয়েছেন। বিবেকানন্দের মতে যা কিছু করা হয় তাই কর্ম। অর্থাৎ এককথায় শরীর, ইন্দ্রিয় ও মনের ক্রিয়াকেই কর্ম বলে। আর এই ‘কর্ম’ যখন মুক্তির উদ্দেশ্যে নিষ্কামভাবে পালিত হয় তখনই তা হয় কর্মযোগ বা নিষ্কাম কর্ম। বিবেকানন্দ তাঁর কর্মযোগকে ব্যাপকতম অর্থে যে-কোনো ধরনের কর্মে সমাধিস্থ হওয়াকে বুঝিয়েছেন। তাঁর ভাষায় কর্মযোগ হল সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিত ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে কর্ম সম্পাদন। লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়, সুখ-দুঃখ প্রভৃতি সমস্ত কিছুকে সমান মনে করে কর্ম করাই হল কর্মযোগ। কর্মযোগ হল কর্মের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি করা।

নিষ্কাম কর্মের স্বরূপ : গীতায় কর্মযোগ আলোচনায় দুই প্রকার কর্মের কথা বলা হয়েছে। যথা- সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। সকাম কর্ম হল রাগ, দ্বেষ, মোহ, কামনা-বাসনাযুক্ত কর্ম। আর নিষ্কাম কর্ম হল রাগ, দ্বেষ, কামনা-বাসনা, কর্তৃত্বাভিমান, অহংবোধ থেকে মুক্ত কর্ম। বিবেকানন্দ গীতার নিষ্কাম কর্মের এই ধারণাকে গ্রহণ করেই তাঁর কর্মযোগ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন।

নিষ্কাম কর্মের অর্থ: গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন মানুষের অধিকার শুধু তার কর্মে, কর্মফলে নয়। কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কর্ম করা যেমন মানুষের কর্তব্য নয় তেমনই কর্ম থেকে বিরত থাকাও মানুষের কর্তব্য নয়। গীতায় যে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে সেটি কর্মফলের আশা ত্যাগ করে করতে হয়। তাই ফলের দিকে না তাকিয়ে মানুষকে নিজের কর্তব্য কর্ম পালন করা উচিত। বিবেকানন্দ মনে করেন মানুষের কর্মের জন্যই কর্ম করা উচিত। কর্ম করা মানুষের অধিকার।

ফলের আসক্তি ত্যাগ: বিবেকানন্দের মতে কর্মফলের আসক্তি হল সকল দুঃখের কারণ। যখন কোনো মানুষ কর্মের ফল পাওয়ার আশায় কর্ম করে তখন ফল আশানুরূপ না হলে সে দুঃখিত বা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই সুখ-দুঃখের ঊর্ধ্বে উঠে নিষ্কামভাবে কর্ম করা মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিত। নিষ্কামভাবে কর্ম করলে কর্মের বন্ধন হয় না।

নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়েই মোক্ষ লাভ হয়। সকাম কর্ম সম্পাদনের দ্বারা জগতের মঙ্গল হয় না। জগতে সবার মঙ্গলের জন্য কর্ম করতে গেলে ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন করতে হবে। কর্মফলের কামনা পরিত্যাগ করে কেবল কর্মসাধনের জন্য যে কর্ম, তাই প্রকৃতপক্ষে সৎ কর্ম। এইরূপে সৎ কর্ম করার উপদেশ গীতার কর্মযোগে দেওয়া হয়।

৩। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অনুসরণ করে স্বাদী বিবেকানন্দের কর্মযোগের সারকথা আলোচনা করো।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন কামনা-বাসনা, কর্তৃত্বাভিমান পরিত্যাগ করে নিজ বুদ্ধিকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে একনিষ্ঠ চিত্তে ঈশ্বরের কর্ম সম্পাদন করতে হবে। গীতায় একেই কর্মযোগ বলা হয়েছে। কর্মযোগের সারকথা তিনটি। সেগুলি হল-

ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন : গীতাকে অনুসরণ করে স্বামীজি বলেন কর্মযোগীকে ফলাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে নিষ্কাম কর্ম করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন “কর্মের জন্য কর্ম করো, কারণ কমেই তোমার অধিকার আছে, কর্মফলে নয়”। কর্মযোগী যেমন সফল কর্মে আনন্দিত হবে না তেমনই বিফল কর্মেও বিষণ্ণ হবে না। প্রত্যেক কর্ম করার ক্ষেত্রে তাকে মনে রাখতে হবে যে সে ভগবানের কর্মই করছে।

কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ: আমি যে কর্ম করলাম তার জন্য আমাকে এই প্রকার ফল পেতে হবে-এইরূপ ধারণাকে বলা হয় কর্তৃত্বাভিমান। একেই ত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ কর্মফলে জীবের আসক্তি থাকবে না। কর্ম সাধনকালে ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে সে যে কর্ম সম্পাদন করছে তা নিজের ইচ্ছায় নিজের কর্ম নয় বরং তা পরমাত্মা বা ঈশ্বরের ইচ্ছায় তাঁর কর্ম সম্পাদন।

ঈশ্বরে সমস্ত কর্মফল সমর্পণ: নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তি যে কর্ম করছে তা তার নিজের ইচ্ছায় নিজ কর্ম নয়, তা ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঈশ্বরের কর্ম। তাই ঈশ্বরে সকল কর্মফল সমর্পণ করে কর্ম করা উচিত। এক্ষেত্রে নিষ্কাম কর্ম কামনাশূন্য হলেও উদ্দেশ্যহীন নয়। কারণ নিষ্কাম কর্ম ঈশ্বরেরই কর্ম।

পরিশেষে বলা যায় নিষ্কাম কর্মই মানুষের মুক্তির উপায়। এই কর্মই মানুষকে কর্মযোগের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। স্থিত হয়ে কর্ম করাই হল নিষ্কাম কর্মযোগের সারকথা। স্বামী বিবেকানন্দ গীতার কর্মযোগের এই বক্তব্যকে অনুসরণ করেছেন।

৪। বিবেকানন্দের কর্মযোগ ধারণার ভিত্তি হল প্রয়োগমূলক বেদান্ত ব্যাখ্যা করো।

অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের ধারণায় কীভাবে প্রয়োগমূলক বেদান্ত প্রতিফলিত হয়েছে?

বেদের অন্ত বা শেষ ভাগকে বলে বেদান্ত। এই বেদান্তকে ভিত্তি করে যে দর্শন শাস্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে সেটি হল বেদান্ত দর্শন। ‘বেদান্ত’ শব্দের অর্থ সর্বোত্তম জ্ঞান। সর্বোত্তম সত্য হল সেটিই যেখানে বলা হয় ‘আমিই সেই পরমসত্তা বা ব্রহ্ম’। বেদান্ত এই চরম সত্যকেই উপলব্ধির কথা বলে। স্বামী বিবেকানন্দ এই অর্থেই বেদান্তকে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন বেদান্তকে শুধু দার্শনিক তত্ত্বরূপে গ্রহণ না করে জীবনের পালনীয় ধর্মরূপে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ বেদান্তে আলোচিত বিষয়কে কর্মে রূপদান করতে হবে এবং বেদান্তের আলোকে জীবনযাপন করতে হবে। তাই অনেকে বিবেকানন্দের বেদান্ত চিন্তাকে ব্যাবহারিক বা প্রয়োগাত্মক বেদান্ত বলেছেন।

বেদান্তের মূল তত্ত্ব: বেদান্তের আদর্শ হল সমস্ত মানুষ দৈব সত্তার অধিকারী। ‘তত্ত্বমসি’ অর্থাৎ ‘তুমিই সেই’-এই কথাই বেদান্তের সারসত্য। স্বামীজি মনে করতেন প্রতিটি মানুষই এক ব্রহ্মের অংশ। এই অদ্বৈতবোধ থেকেই তিনি মানুষকে নিঃস্বার্থ কর্মের দিকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বেদান্তের মূল তত্ত্ব তিনটি হল একত্ব, অন্তর্নিহিত দেবত্ব ও স্বাধীনতা।

  • একত্ব: বেদান্তের মূলকথা হল একত্ব এই বিশ্বে একটি মাত্র সত্তার অস্তিত্ব আছে, তা হল ব্রহ্ম
  • অন্তর্নিহিত দেবত্ব: জীবাত্মা হল অব্যক্ত ব্রহ্ম। বিশ্বের সব মানুষ সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম থেকে উদ্ভূত।
  • স্বাধীনতা: বেদান্তে যে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে তার আর-এক নাম হল মুক্তি। মুক্তি হল আত্মার স্বরূপে অবস্থান।

আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতা : বেদান্তে বলা হয়েছিল যে একজন ব্যক্তি যখন তার অন্তরাত্মার প্রকৃত স্বরূপকে জানে তখন তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। সে স্বনির্ভর হতে শেখে। বিবেকানন্দও তাঁর কর্মযোগের ধারণায় প্রতিটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, প্রতিটি ব্যক্তিকে আত্মনির্ভর হতে বলেছেন। তাঁর মতে কর্মের মধ্যে দিয়েই কোনো ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভর হতে পারে।

কর্মের প্রতি নিষ্ঠা, প্রেম ও ভালোবাসা : কর্তব্য মানুষকে আত্মিক উন্নতির পথ প্রদর্শন করে-এ কথাই বেদান্তে বলা হয়েছে। স্বামীজির কর্মযোগের ভাবনায়ও আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখতে পাই। কর্মযোগের মধ্যে দিয়ে স্বামীজি যে কর্মের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই কর্তব্যকর্মে একদিকে যেমন পূর্ণ নিষ্ঠা থাকবে তেমনই প্রেম ও ভালোবাসাও থাকবে। একইসঙ্গে কর্মের ফলাফলের প্রতি কোনোরূপ প্রত্যাশা বা আসক্তি থাকবে না, তবেই সেটি হবে যথার্থ কর্তব্যকর্ম।

পরিশেষে বলা যায়, যে আত্মজ্ঞান অর্জনের প্রসঙ্গ বেদান্তে বারংবার উত্থাপিত হয়েছে। বিবেকানন্দ তাঁর কর্মযোগের ধারণার মধ্যে দিয়ে সেই কর্তব্যকর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন, যার লক্ষ্য হল আত্মজ্ঞান অর্জন। আত্মজ্ঞান অর্জন করতে পারলে তবেই সেই কর্মের মধ্যে দিয়ে মুক্তিলাভসম্ভব।

৫। মহাত্মা গান্ধির ভাবনায় অহিংসার স্বরূপ আলোচনা করো। 

ভারতীয় দর্শনে মহাত্মা গান্ধির চিন্তাধারায় অহিংসার গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ছিল অহিংসা। অহিংসা সম্পর্কে বেদের বাণী, ভগবান বুদ্ধের ভাবনা এবং ভগবদ্গীতায় বর্ণিত কথাই গান্ধিজির চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর মতে সত্যের পথে চলতে গেলে অহিংসা অপরিহার্য। তাই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি অহিংসা নীতি অবলম্বন করেন, যা তাঁর সত্যাগ্রহ নীতির মূল ভিত্তি।

গান্ধিজির মতে জীবন্ত কোনো কিছুকে আঘাত না করা নিঃসন্দেহে অহিংসার একটি দিক। কিন্তু এটি ‘অহিংসা’ শব্দের ন্যূনতম প্রকাশ বা অভিব্যক্তি মাত্র। তাঁর মতে অশুভ চিন্তা বা ইচ্ছার দ্বারা, মিথ্যা কথার দ্বারা ও হঠকারিতার দ্বারা কাউকে আঘাত না করাও ‘অহিংসা’ শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত হয়। ‘অহিংসা’-র অর্থ হল নিজের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চিন্তাভাবনা সব দিক থেকে অন্যের প্রতি দয়া, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ করা।

মানবসভ্যতার ইতিহাসের ধারা পর্যালোচনা করে গান্ধিজি দেখেছেন যে, মানুষ হিংসার পথ পরিত্যাগ করে ক্রমশ অহিংসার দিকে এগিয়ে চলেছে। কারণ হিংসা দিয়ে কোনো কিছুর স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়। হিংসা মানুষকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবং মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিনাশ ঘটায়। তিনি ব্যক্তিগত হিংসা ও প্রাতিষ্ঠানিক হিংসার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। ব্যক্তিগত হিংসা হল অন্যকে দমন বা পীড়ন করা। আর প্রাতিষ্ঠানিক হিংসার উদ্ভব হয় দারিদ্র্য, বেকারত্ব প্রভৃতি দ্বারা উদ্ভূত ক্ষোভ থেকে। গান্ধিজি বিশ্বাস করতেন অহিংস পথের দ্বারা প্রতিপক্ষের বিবেকবুদ্ধিকে জাগ্রত করতে হবে এবং তাদের অন্তরশুদ্ধি ঘটিয়ে ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। যার ফলে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধন সম্ভব হবে অর্থাৎ সর্বোদয় প্রতিষ্ঠা পাবে।

গান্ধিজির অহিংসা মন্ত্রে দীক্ষিত হলে ধনী-দরিদ্র, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, সবল-দুর্বলের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। তিনি অহিংস পথে এইরূপ সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রামরাজ্য গড়ে তোলার কথা বলেন।

৬। অহিংসার তাত্ত্বিক ভিত্তিগুলি আলোচনা করো।

তাত্ত্বিক ভিত্তি:

গান্ধিজির অহিংসার দর্শনের তাত্ত্বিক ভিত্তিগুলি নিম্নরূপ-

সত্য: গান্ধিজির অহিংসা তত্ত্বের মূল ভিত্তি ছিল সত্য। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সত্যই একমাত্র শক্তি যা মানবজাতির কল্যাণ ও নিশ্চিত করতে পারে। অর্থাৎ সত্যকে অনুসরণ করার একটি পদ্ধতি হল অহিংসা। সত্যের পথে কেউ যদি অবিচল থাকতে চায় তবে তাঁকে যে-কোনো সহিংস পথ থেকে সরে আসতে হবে। কেন-না সহিংসতা ও সত্য কখনোই একসঙ্গে থাকতে পারে না।

আত্মনির্ভরতা: আত্মনির্ভরতা বিষয়ে গান্ধিজি বলেন যে আমাদের স্বনির্ভরশীল হতে হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, কোনো ব্যক্তি বা জাতি যদি স্বনির্ভর হতে চায় তবে তাকে সম্পূর্ণ অহিংসভাবে জীবনযাপন করতে হবে।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: গান্ধিজির অহিংসা নীতি ছিল ধর্মীয় সহিষুতার ভিত্তিতে গড়া। তিনি সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে অহিংসা একজন মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং একে অপরের প্রতি সম্মান ও সহিয়তা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত করবে।

সামাজিক ন্যায় ও সমতা: গান্ধিজির অহিংস দর্শনে সামাজিক ন্যায় ও সমতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন যে অহিংসা শুধুমাত্র সংঘর্ষ বা যুদ্ধের বিরুদ্ধেই নয় বরং এটি সমাজে বৈষম্য, বর্ণবাদ, দারিদ্র্য ও শোষণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র। তাই বলা যায় একমাত্র অহিংসার চর্চাই সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করবে।

আধ্যাত্মিকতা: আধ্যাত্মিকতা ছিল গান্ধিজির অহিংস দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তিনি মনে করতেন যে অহিংসা একটি আধ্যাত্মিক চর্চা, যা মানুষের মনকে শাস্তি দেয়। তাই অহিংসার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের আত্মশুদ্ধিকরণ ছিল গান্ধিজির অন্যতম উদ্দেশ্য।

পরিশেষে বলা যায় যে গান্ধিজির অহিংসার দর্শন এক সামগ্রিক জীবনাদর্শ যা সত্য, ন্যায় ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি শ্রদ্ধায় নিবন্ধ ছিল।

৭। অহিংসার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

অহিংসার বৈশিষ্ট্য :

গান্ধিজি অহিংসাকে অসীম সর্বশক্তিময় এবং ঈশ্বরের প্রতিরূপ বলে অভিহিত করেছেন। অহিংসাকে তিনি তাঁর জীবনের আরাধ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর অহিংসা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

জীবের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ: অহিংসার দ্বারা সব জীবের অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে সম্মান জানানো হয়। অর্থাৎ কোনো জীবের প্রতি হিংসাৰূপ আচরণ করা হয় না। সহজ ভাষায় কায়মনোবাক্যে হিংসা থেকে দূরে থাকা হল অহিংসা।

অহিংসার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ: গান্ধিজি অহিংসা মন্ত্রে সকলকে দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ বা যে-কোনো ধরনের হিংসাত্মক প্রতিবাদের চরম বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে যুদ্ধের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি অর্জন করা যায় না। তাই অহিংস উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করে কোনো সমস্যার সমাধান করাই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।

অহিংসা সবলের হাতিয়ার: গান্ধিজির মতে অহিংসা দুর্বল প্রকৃতির মানুষদের জন্য নয়। তিনি বলেছিলেন দুর্বলতা, ভীরুতা ও কাপুরুষতা ত্যাগ করতে পারলেই অহিংসার পথ অনুসরণ করা সম্ভব হবে। তাই অহিংসা কাপুরুষ বা দুর্বলের হাতিয়ার হতে পারে না। এটি সবলের হাতিয়ার।

ভালোবাসা ও করুণা প্রদর্শন: অহিংসার দ্বারা শত্রুর প্রতি মমতা ও দয়া প্রদর্শন করা হয়। শত্রুর কোনোরূপ ক্ষতি সাধন না করে ভালোবাসার দ্বারা তার হৃদয় পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই কারণে গান্ধিজি হিংসার পথ পরিহার করে অহিংসাকে জীবন নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

অহিংসা আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক: গান্ধিজি মনে করতেন যে অহিংসা হল আধ্যাত্মিক বা নৈতিক শক্তি। তাই পুরোমাত্রায় ঈশ্বরবিশ্বাসী না হলে অহিংস ও নির্ভীক হওয়া যায় না। ঈশ্বরের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাসই মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করতে সাহস জোগায়।

অহিংসা হল চারিত্রিক গুণ: গান্ধিজি অহিংসাকে একটি চারিত্রিক গুণ বলে মনে করতেন। তাঁর মতে অহিংসকের অর্থ একজন চরিত্রবান পুরুষ। চরিত্র অর্জন করে সেটিকে সম্বল করে তবেই যুদ্ধ করতে। হবে। এই যুদ্ধে যতই দুঃখকষ্ট আসুক না কেন অহিংসক পুরুষ সেইগুলিকে অতিক্রম করে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন।

৮। অহিংসার সঙ্গে সত্যাগ্রহের সম্বন্দ্ব আলোচনা করো।

‘অহিংসা’ শব্দটির মতো ‘সত্যাগ্রহ’ শব্দটিও গান্ধিজির মতবাদে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গান্ধিজির মতে অহিংসা ও সত্যাগ্রহের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। কারণ অহিংসার মন্ত্র যদি মানুষের অন্তরে না থাকে তাহলে সত্যাগ্রহের আদর্শকে প্রয়োগ করা যায় না। অহিংসা নীতির একটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ হল সত্যাগ্রহ। অর্থাৎ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে অহিংসার ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়।

আক্ষরিক অর্থে ‘সত্যাগ্রহ’ শব্দটি এসেছে ‘সত্য’ ও ‘আগ্রহ’ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে। সত্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষাই হল সত্যাগ্রহ। আবার সত্যলাভের পন্থাকেও সত্যাগ্রহ বলা হয়। গান্ধিজি হিন্দ স্বরাজ গ্রন্থে বলেছেন, সত্যাগ্রহ হল ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট স্বীকার করে অধিকার অর্জন করা। বস্তুত সত্যাগ্রহ হল বলপ্রয়োগ না করে অর্থাৎ ঘৃণা, ক্রোধ ও হিংসার আশ্রয় না নিয়ে যুদ্ধ করার এক অভিনব কৌশল। সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তা এমনভাবে করতে হবে যাতে কাউকে আঘাত না করা হয়। সত্য যদি অস্ত্র হয় তাহলে অহিংসা হল তার ব্যবহার করার উপায়। গান্ধিজি বলেছিলেন সত্যাগ্রহ ছাড়া অহিংসা কল্পনাও করা যায় না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি সত্যাগ্রহে অংশ নিতে চাইলে তাকে অহিংস মনোভাব গ্রহণ করতেই হবে।

সত্যাগ্রহের কথা বলতে গিয়ে গান্ধিজি বলেছেন যে সত্যাগ্রহ হল এমন একটি আন্দোলন যা সম্পূর্ণভাবে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যা হিংসাকে দূরে সরিয়ে রাখে। সহজ কথায় হিংসার রাজত্ব থেকে বাঁচার একমাত্র আন্দোলন হল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহ অহিংসা ও আত্মপীড়নের মাধ্যমে সার্থকতা লাভ করে। অধ্যাপক নির্মল কুমার বসু গান্ধি প্রণীত সত্যাগ্রহকে অহিংস যুদ্ধ বলেছেন। তাঁর মতে ‘সত্যাগ্রহ হল অহিংসার মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনার একটি উপায়’। অধ্যাপক কৃষ্ণলাল শ্রীধরণীর মতে ‘গান্ধিজির সত্যাগ্রহ একটি অহিংস সংগ্রামের পথ’। অতএব সত্যাগ্রহ নিজের অধিকার অর্জনের স্বার্থে গৃহীত অহিংস ও সত্যবদ্ধ ন্যায়যুদ্ধ।

৯। গান্ধিজিকে অনুসরণ করে সত্যাগ্রহীর লক্ষণগুলি আলোচনা করো।

গান্ধিজির মতে সত্যাগ্রহ ব্যক্তির এক সহজাত বা জন্মগত অধিকার এবং পবিত্র কর্তব্য। কঠিন মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিই কেবল সত্যাগ্রহের পথ অবলম্বন করতে পারে। সত্যাগ্রহের জন্য একটি কঠোর নৈতিক ও ধর্মীয় নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন। গান্ধিজি এই নিয়মানুবর্তিতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একজন সত্যাগ্রহীর কিছু বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেইগুলি হল-

সত্যবাদীতা: গান্ধিজির সত্যাগ্রহের মূল ভিত্তি ছিল সত্য। সত্যের প্রতি যার একনিষ্ঠভাবে আগ্রহ আছে তিনিই সত্যাগ্রহী। যত প্রতিকূল পরিস্থিতি আসুক না কেন সত্যের পথে থাকতে হবে, তাকে কোনো অবস্থাতেই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

অহিংসা: সত্যাগ্রহী ব্যক্তিকে কায়মনোবাক্যে অহিংস হতে হবে। কোনোরকম হিংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে কোনোভাবেই সে যুক্ত থাকতে পারবে না। সত্যনিষ্ঠভাবে অহিংস পথে চলাটাই গান্ধিজির কাছে সত্যাগ্রহের প্রকৃত অর্থ।

নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস: সত্যাগ্রহী ব্যক্তির কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকতে হবে এবং তাকে দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। অর্থাৎ সত্যাগ্রহী হবেন দৃঢ়চিত্ত বিশিষ্ট একজন নিয়মনিষ্ঠ সৈনিক। তাঁর নিজের প্রতি অটল ও অবিচল বিশ্বাস থাকতে হবে।

ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা: সত্যাগ্রহের পথ অত্যন্ত কঠিন তাই সে অনেক অযাচিত প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তাকে ধৈর্য্য ও সহিষুতা হারালে চলবে না। অন্যদের তুলনায় তাকে সবার প্রতি অনেক বেশি সহিষ্ণু হতে হবে। কোনো পরিস্থিতিই যেন তাকে কোনো হিংসাত্মক কাজে প্ররোচিত না করতে পারে সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

নির্ভীকতা: নির্ভীকতা হল সত্যাগ্রহীর একটি অন্যতম গুণ। গান্ধিজির মতে যিনি ভয়কে জয় করতে পারেননি তিনি সত্যাগ্রহের পথ অনুসরণ করতে পারবেন না।

সর্বোপরি গান্ধিজির আদর্শকে অনুসরণ করে একজন সত্যাগ্রহী ব্যক্তি সমাজে ন্যায়, শাস্তি এবং সম্ভাব বজায় রাখতে নিজেকে নিবেদিত ও নিয়োজিত রাখবে।

১০। গান্ধিজি তাঁর রাজনৈতিক ভাবনায় কীভাবে অহিংসার স্বরূপ ও গুরুত্ব নির্দেশ করেছেন?

অহিংসার স্বরূপ:

গান্ধিজি তাঁর সমাজবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে সমাজ গঠন করার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন তা হল সর্বোদয় সমাজ। তিনি ‘সর্বোদয় সমাজ’ বলতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সার্বিক উদয় বা উৎকর্ষ

সাধনকেই বোঝাতে চেয়েছেন। এই সর্বোদয় সমাজ গঠনের উপায় হিসেবে তিনি অহিংসার কথা বলেন। গান্ধিজি মনে করতেন যে একমাত্র অহিংসার পথ অবলম্বন করেই প্রতিপক্ষের দুষ্ট স্বভাবের পরিবর্তন ঘটানো ও তাদের বিবেকবুদ্ধি জাগ্রত করে চরিত্র সংশোধন করা সম্ভব। তাঁর মতে অহিংসাকে হাতিয়ার করেই সমাজের সংস্কার সাধন করে সর্বোদয় সমাজ গঠন করা যায়। ‘অহিংসা’ বলতে গান্ধিজি বোঝাতে চেয়েছেন অন্যের প্রতি শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সকল প্রকার ঘৃণা, ক্রোধ ও অশুভ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা।

অহিংসার গুরুত্ব:

গান্ধিজির রাজনৈতিক আন্দোলনে অহিংসার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করতেন যে সমাজকে সত্য, ন্যায় এবং মানবিক মর্যাদার দিকে অগ্রসর করতে পারে একমাত্র অহিংসা।

সমাজের ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা: অহিংসা প্রতিটা মানুষের মধ্যে সমতা এবং নিজের অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এই নীতির মাধ্যমে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ, জাতিগত বা ধর্মীয় হিংসা এড়ানো যায় এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

নৈতিক শক্তি: গান্ধিজির মতে অহিংসা কোনো দুর্বল নীতি নয়, এটি একটি শক্তিশালী নীতি। অহিংসার মধ্যে এমন এক অন্তর্নিহিত শক্তি আছে যা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী করে তোলে।

সামাজিক পরিবর্তন : অহিংসার মাধ্যমে সমাজে অশান্তি, বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সম্ভব। প্রতিপক্ষের শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গান্ধিজির অহিংসা তত্ত্ব এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment