ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা | WBBSE Class 8 History Chapter 3

অষ্টম শ্রেণির প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নে ইতিহাস বিষয়ে মোট 15 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 15 নম্বরের মধ্যে ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অধ্যায় থেকে মোট 12 নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষায় এখান থেকে একটি বড়ো প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। বড়ো প্রশ্নের ধরন হবে 5 নম্বরের এবং মাঝারি প্রশ্নের ধরন হবে 3 নম্বরের। ছোটো প্রশ্নের ধরন হবে গোটা 2 ও 1 নম্বরের। আজকের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে অষ্টম শ্রেণির প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন ও তৃতীয় পর্বের পরীক্ষার জন্য এই অধ্যায় থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্তরসহ তুলে ধরা হল।

ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

Table of Contents

১। পিটের ভারত শাসন আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? এই আইনে কোম্পানির পরিচালনার বিষয়ে কী বলা হয়?

রেগুলেটিং আইনের ত্রুটি ধরা পড়লে তার প্রতিকারের জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছোটো পিট (Younger Pitt)-এর আমলে একটি নতুন আইনের প্রস্তাব পাস হয়। এটিই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট, ১৭৮৪ বা সাধারণভাবে পিটের ভারত শাসন আইন (Pitt’s India Act 1784) নামে পরিচিত। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে আইনটি বলবৎ হয়েছিল।

পিটের ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্য: পিটের ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্যগুলি হল-

  1. ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটিগুলি দূর করা এবং
  2. ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকার যতটা সম্ভব অক্ষুণ্ণ রেখে তার কাজকর্মের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

পিটের ভারত শাসন আইনে কোম্পানির পরিচালনা বিষয়ক ধারা: এই আইনে কোম্পানির শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

  1. ভারতে কোম্পানির গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা চার থেকে কমিয়ে তিন করা হয়।
  2. কোম্পানির সামরিক ও অসামরিক শাসন ও রাজস্বব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বোর্ড অফ কন্ট্রোল গঠন করা হয়। 
  3. মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির উপর গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
  4. কোম্পানির ইংরেজ কর্মচারীগণ ভারত থেকে স্বদেশে ফিরে আসার সময় কী পরিমাণ টাকা নিয়ে আসছে তার হিসাব দাখিল করার কথা বলা হয়।
  5. আইনে বলা হয় যে, ভারতে রাজ্যজয় ইংরেজ জাতির অভিপ্রায় ও আদর্শের বিরোধী।

পরিশেষে বলা যায়, পিটের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ব্রিটিশ সরকার ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়েছিল। এই আইনে যে প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় অক্ষুণ্ণ ছিল।

২। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস-এর শাসনব্যবস্থাগুলি লেখো।

রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে ভারতে কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস। আলফ্রেড লায়াল (Alfred Layall)-এর মতে, “শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে হেস্টিংস মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন।”

শাসন সংস্কারসমূহ: ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসন সংস্কারগুলি হল নিম্নরূপ-

(i) দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান: লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে গভর্নর নিযুক্ত হয়ে এসেই ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটাতে তৎপর হন। ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ অনুসারে হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটান।

(ii) নায়েব-সুবা পদের অবলুপ্তি: ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত দায়িত্ব কোম্পানির হস্তগত করেন। বাংলা ও পাটনার নায়েব-সুবা যথাক্রমে মহম্মদ রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করা হয়।

(iii) রাজস্ব বোর্ড (Board of Revenue) গঠন: বাংলার গভর্নর পদে নিযুক্ত হয়ে এসে হেস্টিংস রাজস্ব সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে ব্রতী হন। তিনি Board of Revenue বা রাজস্ব বোর্ড গঠন করে তার উপর দেওয়ানি সংক্রান্ত সকল দায়িত্ব অর্পণ করেন।

(iv) বিচারবিভাগীয় সংস্কার: মুঘল আমল থেকে ভারতে রাজস্বব্যবস্থার সঙ্গে বিচারব্যবস্থা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। হেস্টিংস সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক কার্যকলাপ থেকে শাসনবিভাগকে বিচ্ছিন্ন করেন। তাঁর নির্দেশে ১০ জন হিন্দু পণ্ডিত হিন্দু-আইনবিধি সংকলন করেন। ফৌজদারদের পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করা হয় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকদের হাতে।

(v) কেন্দ্রীভূত শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা: দেওয়ানির কোশাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করে হেস্টিংস কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেন।

(vi) পুলিশি ব্যবস্থা গঠন: ওয়ারেন হেস্টিংস মুঘল আমলের পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার করেন। তিনি বাংলাকে ১০টি এবং বিহারকে ৮টি ফৌজদারি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক অঞ্চলে থানা প্রতিষ্ঠা করে একজন ফৌজদারকে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব দেন। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ফৌজদার পদ বাতিল করে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরদের এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

(vii) আর্থিক সংস্কার: অবিরাম যুদ্ধবিগ্রহের ফলে কোম্পানির কোশাগার শূন্য হয়ে পড়েছিল। তার উপর সেই সময় ইংল্যান্ড, ইউরোপ ও আমেরিকার যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় ইংল্যান্ড থেকে অর্থসাহায্যের কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। এমতাবস্থায় হেস্টিংস কিছু গর্হিত উপায় অবলম্বন করে অর্থসংগ্রহ করেছিলেন।

৩। বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচারব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করো।

দ্বৈতশাসনের কালে বাংলার বিচারব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলায় প্রথম সুসংহত বিচারব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিচারব্যবস্থার সংস্কার

মফস্সল দেওয়ানি ও মফস্সল ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা: ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলাকে ৩৫টি জেলায় ভাগ করেন এবং প্রতি জেলায় মফস্সল দেওয়ানি ও মফস্সল ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন।

সদর দেওয়ানি ও সদর নিজামত আদালত প্রতিষ্ঠা: মফস্সল দেওয়ানি ও মফস্সল ফৌজদারি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কলকাতায় সদর দেওয়ানি আদালত ও মুর্শিদাবাদে সদর নিজামত আদালত স্থাপন করেন।

বিচারের এক্তিয়ার

  1. ১০ টাকার কম মামলার বিচার ইজারাদাররা করতে পারতেন।
  2. ৫০০ টাকা পর্যন্ত মামলার বিচার করতে পারত মফস্সল দেওয়ানি আদালত।
  3. ৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে যে-কোনো মামলার বিচার হত সদর দেওয়ানি আদালতে।

বিচারক : জেলার কালেক্টর জেলার উভয় আদালতে হিন্দু পণ্ডিত ও কাজির সাহায্য নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।

  1. দেওয়ানি: সদর দেওয়ানি আদালতে গভর্নর ও তার কাউন্সিলের দুজন সদস্য বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।
  2. নিজামত: সদর নিজামত আদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন নবাব। নবাবের প্রতিনিধি, প্রধান কাজি ও মুফতি এই বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করতেন। গভর্নর জেনারেল এই আদালতের কাজকর্মের উপর নজর রাখতেন।

নতুন নিয়মবিধি: নতুন আইনবিধিতে- 

  • অভিযোগ পেশের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়, 
  • দৈহিক শাস্তি রদ করা হয়, 
  • বিচারকদের বেতনদানের ব্যবস্থা করা হয়, 
  •  আদালতের কার্যবিবরণী লিখে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

এইভাবে ওয়ারেন হেস্টিংস ও সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পে ভারতীয় বিচারব্যবস্থাকে ইউরোপীয়করণ করার চেষ্টা করেন।

৪। ওয়ারেন হেস্টিংস পুলিশি ব্যবস্থার কী সংস্কার করেন?

ইংরেজরা যখন বাংলার শাসনক্ষমতা লাভ করে তখন বাংলার পুলিশি ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। ওয়ারেন হেস্টিংস শাসনভার গ্রহণ করে এদেশে পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তনে সচেষ্ট হন। তিনি প্রাক্-ব্রিটিশ আমলের বা নবাবি আমলের পুলিশি ব্যবস্থার সঙ্গে কিছু নতুন ব্যবস্থা সংযোজন করেন।

সংস্কার

  1. বাংলা ও বিহার যথাক্রমে ১০টি ও ৮টি ফৌজদারি জেলায় বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একজন ফৌজদার এবং তার অধীনে কয়েকজন সিপাহি থাকত।
  2. সিপাহি ও অন্যান্য মোট ৩৪ জন কর্মচারী ফৌজদারকে সেই অঞ্চলের শান্তিরক্ষার কাজে সাহায্য করতেন।
  3. শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন কোতোয়াল।
  4. গ্রামাঞ্চলে জমিদাররা নিজ নিজ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন। ওয়ারেন হেস্টিংস পুলিশি ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য সচেষ্ট হন।
  5. ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে হেস্টিংস ফৌজদারের পদ তুলে দেন এবং কোম্পানির দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছু সংখ্যক সিপাহি ও কেরানি তার কাজে সাহায্য করত।
  6. কালেক্টরদের অধীনে শান্তিরক্ষার জন্য বেতনভোগী বরকন্দাজ বাহিনী গঠন করেন।

ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন যে, ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন ভারতে ব্রিটিশশাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তবে ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারেননি।

৫। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর রাজস্ব বিষয়ক পরীক্ষানিরীক্ষার বিবরণ দাও।

দ্বৈতশাসন ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০ খ্রি.) বাংলাদেশে এক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এর ফলে কোম্পানির রাজস্ব আদায় কমে যায়। অতএব বাংলার গভর্নর (পরে গভর্নর জেনারেল) ওয়ারেন হেস্টিংস আয় বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব বিষয়ক পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।

রাজস্ব বিষয়ক পরীক্ষানিরীক্ষা 

(i) পাঁচসালা বন্দোবস্ত: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস প্রতি জেলায় ভ্রাম্যমান সমিতি (Committee of Circuit) গঠন করেন। ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর এই সমিতির সদস্য ছিলেন। তারা নিজ নিজ জেলায় নিলামের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ রাজস্বদাতাদের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত করেন। এই ব্যবস্থা পাঁচসালা বা ইজারাদারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

(ii) একসালা বন্দোবস্ত: পাঁচসালা বন্দোবস্তের (১৭৭২-৭৭ খ্রি.) মেয়াদ শেষ হলে এই ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। অনেক ইজারাদার দেয় রাজস্ব সরকারকে জমা না দিয়ে পলাতক হয়। ফলে বর্ধিত রাজস্ব অনাদায়ীই থেকে যায়। এই কারণে ওয়ারেন হেস্টিংস নিলামের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ রাজস্বদাতাদের এক বছরের মেয়াদে জমি বন্দোবস্ত দেন (১৭৭৭ খ্রি.)। এই ব্যবস্থা একসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

(iii) রাজস্ব বোর্ড: ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মুঘল ও নবাবি আমলে জমির মালিকানা, জমিতে কৃষকের অধিকার ও রাজস্বের হার সম্বন্ধে তথ্যসংগ্রহ করা।

(iv) আমিনি কমিশন: ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস গঠন করেন আমিনি কমিশন। চাষযোগ্য জমির পরিমাণ এবং জমির এককগুলির আয়তন হিসাব করা, জমির মালিকানা এবং জমিতে কৃষকের অধিকার সম্বন্ধে তথ্যসংগ্রহ করা এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল।

কোম্পানির আমলে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তার প্রচেষ্টা রাজস্ব সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তবুও এর ফলে জমি ও রাজস্ব সম্বন্ধে বহু তথ্য পাওয়া যায়। এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে নির্ধারিত রাজস্ব বন্দোবস্ত হয়।

৬। লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ উল্লেখ করো।

লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রশাসনিক সংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হওয়ার পর ভারতের প্রশাসনিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। লর্ড কর্নওয়ালিস আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ইংল্যান্ডের লক্ষ্য হল ইংল্যান্ডের অনুকরণে উপনিবেশীয় ভারতের শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা।

(i) দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন: কোম্পানির আমলে কর্মচারীরা বেআইনি ব্যাবসাবাণিজ্যে লিপ্ত হত এবং একাধিক পদ দখল করে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। কর্নওয়ালিস স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য ঘোষণা করেন যে, (ক) কোম্পানির কোনো কর্মচারী ব্যক্তিগত বাণিজ্যে লিপ্ত হতে পারবে না এবং (খ) একই কর্মচারী একাধিক বিভাগে নিযুক্ত হতে পারবে না।

(ii) কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি: কোম্পানির কর্মচারীদের অল্প বেতনে কাজ করতে হত। লর্ড কর্নওয়ালিস উপলব্ধি করেন যে, কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হল তাদের অল্প বেতন। তিনি কর্মচারীদের পদ ও অভিজ্ঞতা অনুসারে বেতন বৃদ্ধি করে তাদের কর্মদক্ষ করে তুলতে সচেষ্ট হন।

(iii) ইউরোপীয়দের নিয়োগ: লর্ড কর্নওয়ালিস সরকারি উচ্চপদে বা বছরে ৫০০ পাউন্ডের বেশি বেতনের চাকুরিতে ভারতীয়দের নিয়োগ নিষিদ্ধ করেন। ওইসব উচ্চপদে ইউরোপীয়দের নিয়োগ প্রথা চালু হয়।

(iv) পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি গড়ে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে সার্কেল বা থানার সৃষ্টি করেন। প্রতি থানায় একজন ভারতীয় দারোগা থাকতেন। দারোগা কয়েকজন কনস্টেবলের সাহায্যে থানা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন।

ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতিষ্ঠাতা ও পথিকৃৎ ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। তার প্রশাসনিক সংস্কার ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করেছিল।

৭। লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচারব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্দেশ্য কী ছিল? তিনি বিচারব্যবস্থায় কী সংস্কার করেন?

গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন। বাংলার বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে ওয়ারেন হেস্টিংস যে কাঠামো গড়ে তোলেন কর্নওয়ালিস তাকে সম্পূর্ণতা দান করেন।

কর্নওয়ালিসের উদ্দেশ্য

কর্নওয়ালিসের উদ্দেশ্য ছিল-

  • প্রথমত, মুসলিম আইনের ত্রুটি দূর করে বিচারব্যবস্থায় ইউরোপীয় চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটানো।
  • দ্বিতীয়ত, বিচারব্যবস্থার উন্নতি ও আধুনিকীকরণ করা।
  • তৃতীয়ত, বিচারব্যবস্থায় ইউরোপীয় বিচারকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

সংস্কার

  1. কর্নওয়ালিস কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পাটনা ও ঢাকায় চারটি প্রাদেশিক দেওয়ানি আদালত স্থাপন করেন। এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সদর দেওয়ানি আদালতে আপিল করা যেত।
  2. সদর দেওয়ানি আদালতের অধীন পর্যায়ক্রমে প্রদেশ, জেলা, সদর আমিন ও মুনসেফি আদালত স্থাপন করেন।
  3. তিনি জেলার ফৌজদারি আদালত তুলে দেন এবং কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, পাটনা ও ঢাকায় চারটি ভ্রাম্যমান আদালত প্রতিষ্ঠা করেন। এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সদর নিজামত আদালতে আপিল করা যেত। সদর নিজামত আদালত মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

বিচারক :

  1. দেওয়ানি: সপার্ষদ গভর্নর জেনারেল সদর দেওয়ানি আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। জেলার দেওয়ানি আদালতে জজ পদাধিকারী ইংরেজ বিচারক বিচারকার্য সম্পাদন করতেন।
  2. নিজামত: সদর নিজামত আদালতে সপার্ষদ গভর্নর জেনারেল বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। প্রাদেশিক আদালতে কাজি ও মুফতিকে সঙ্গে নিয়ে দুজন ইংরেজ বিচারক বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।

বিচারব্যবস্থায় দণ্ডবিধির কঠোরতা হ্রাস এবং মানবিকতার আদর্শ তুলে ধরে কর্নওয়ালিস বিচার সংস্কারে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

৮। লর্ড কর্নওয়ালিস পুলিশি ব্যবস্থার কী সংস্কার করেন?

গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হল পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার। পূর্বে জমিদারগণ নিজ নিজ এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।

সংস্কার

লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কার অনুসারে-

  1. কর্নওয়ালিস জমিদারদের কাছ থেকে পুলিশি ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি নিয়মিত পুলিশবাহিনী গড়ে তোলেন।
  2. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যেক জেলাকে কতকগুলি থানায় ভাগ করে প্রতি থানায় একজন দারোগা নিযুক্ত করেন। প্রতি থানার গড় এলাকা ২০ মাইল নির্ধারিত হয়। প্রতি থানায় ২০-৩০ জন কনস্টেবল রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
  3. জেলার ম্যাজিস্ট্রেট দারোগা নিয়োগ ও থানার কাজকর্মের উপর নজর রাখতেন।
  4. প্রত্যেক গ্রামের চৌকিদার গ্রামের আইনশৃঙ্খলার উপর নজর রাখতেন।
  5. শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোতোয়াল থাকতেন। কলকাতার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট নিযুক্ত হয়েছিলেন।

কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত পুলিশি ব্যবস্থা পরবর্তীকালে সমগ্র ভারতবর্ষে চালু হয়। কয়েকজন কনস্টেবলের সাহায্যে একটি বিরাট থানার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা সহজসাধ্য না হলেও, পুলিশি ব্যবস্থায় কর্নওয়ালিসের সংস্কার তার সৃজনপ্রতিভার সাক্ষ্য বহন করে।

৯। লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কারগুলি ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে কতটা মজবুত করেছিল?

ভারতের গভর্নর জেনারেল হিসেবে লর্ড কর্নওয়ালিস ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ কিছু সংস্কারসাধন করেছিলেন।

লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কার: পুলিশি ব্যবস্থা ও সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কারগুলি হল-

পুলিশি ব্যবস্থা

  1. লর্ড কর্নওয়ালিস জমিদারদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি নিয়মিত পুলিশবাহিনী গঠন করেন।
  2. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জেলাগুলির দেখাশোনা করার জন্য তিনি থানা ব্যবস্থা চালু করেন। প্রতিটি থানা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দারোগার উপর।
  3. জেলার ম্যাজিস্ট্রেট দারোগা নিয়োগ ও থানার কাজকর্মের উপর নজর রাখতেন। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার ফলে দারোগা পদের বিলুপ্তি ঘটে এবং গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় কালেক্টরদের হাতে।
  4. ব্রিটিশ কোম্পানির তরফ থেকে লর্ড কর্নওয়ালিস পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ‘আইনের শাসন’ প্রতিষ্ঠা করেন।

সেনাবাহিনী

  1. ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করে লর্ড কর্নওয়ালিস সেই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
  2. এ সময় উত্তর ভারতে কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয়। ভারতীয় সেনারা সাধারণভাবে ‘সিপাহী’ নামে পরিচিত ছিল। এদের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
  3. কোম্পানির পক্ষ থেকে এলাকা দখলের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করাও ছিল সিপাহীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এভাবেই ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় লর্ড কর্নওয়ালিসের বিভিন্ন সংস্কারগুলি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভিত্তি মজবুত করেছিল।

১০। ওয়ারেন হেস্টিংস ও কর্নওয়ালিসের সংস্কার লিপিবদ্ধ করো।

ওয়ারেন হেস্টিংসের সংস্কার

রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস। কোম্পানির শাসনকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

(i) শাসনসংস্কার: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটান।

(ii) বিচারবিভাগীয় সংস্কার :

  1.  ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথম বাণিজ্যিক কার্যকলাপ থেকে শাসনবিভাগকে বিচ্ছিন্ন করেন। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির তরফে নতুন বিচারব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলাকে ৩৫টি জেলায় ভাগ করে প্রতি জেলায় মফস্সল দেওয়ানি ও মফস্সল ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন।
  2. বিচারব্যবস্থায় সমতা আনতে ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে ১০ জন হিন্দু পন্ডিত হিন্দু-আইনবিধি সংকলন করেন।

পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার :

  1. ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার প্রত্যেক জেলায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ফৌজদার ও সিপাহী নিয়োগ করেন। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ফৌজদার পদ তুলে দিয়ে দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
  2. তিনি শান্তিরক্ষার জন্য কালেক্টরদের অধীনে বেতনভোগী বরকন্দাজ বাহিনী গঠন করেন।

রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার :

  1. বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসার পর রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ওয়ারেন হেস্টিংস Board of Revenue বা রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন।
  2. রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কোম্পানির যাবতীয় দায়িত্ব তিনি হস্তগত করে নেন। এ সময় বাংলা ও পাটনার নায়েব-সুবা যথাক্রমে মহম্মদ রেজা খাঁ ও সিতার রায়কে পদচ্যুত করা হয়।

শিক্ষা সংস্কার:

  1. ফারসি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষা জানা লোকেদের ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব দফতরের কাজে নিয়োগ করেছিলেন।
  2. তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃত পণ্ডিতদের কলকাতায় বিদ্যাচর্চার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে আরবি ও ফারসি ভাষাচর্চার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

লর্ড কর্নওয়ালিসের সংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিসের নানাবিধ সংস্কারগুলি হল-

শাসনসংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিস ব্রিটিশ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করেন।

বিচার ব্যবস্থার সংস্কার: ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস আইনগুলি সংহত করে কর্নওয়ালিস কোড প্রবর্তন করেন। তার ফলে দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা করা হয়।

পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। জমিদারদের কাছ থেকে পুলিশি ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তিনি একটি নিয়মিত পুলিশবাহিনী গঠন করেছিলেন।

১১। উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক-এর শাসন ও বিচারসংস্কার সম্বন্ধে আলোচনা করো।

ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা উদারনীতিবাদের ভারতীয় রূপকার ছিলেন লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক। ভারত ইতিহাসে তার শাসনকাল (১৮২৮-৩৫খ্রি.) এক গৌরবময় অধ্যায়। এই সময়ে শাসন ও বিচারক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার সাধিত হয়েছিল।

শাসনসংস্কারসমূহ 

(i) কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্প্রসারণ: লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক-এর আমলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কোম্পানির জন্য সনদ আইন (১৮৩৩ খ্রি.) পাস করে। কোম্পানি এইসময় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বেন্টিঙ্ক তার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করেন। টমাস ব্যাবিংটন মেকলে প্রথম আইন সদস্য হন।

(ii) প্রশাসনিক পুনর্গঠন: বেন্টিঙ্ক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদগুলিকে সমান করে দেন। কয়েকটি জেলা নিয়ে বিভাগ বা ডিভিশন গঠন করেন। ডিভিশনের দায়িত্ব দেন কমিশনারকে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জজ ও পুলিশ আধিকারিকদের কাজের তত্ত্বাবধান করতেন গভর্নর জেনারেল স্বয়ং।

(iii) উদারবাদী নীতি প্রয়োগ: এতদিন পর্যন্ত ভারতীয়দের উচ্চ সরকারি পদে নিয়োগ করা হত না। বড়োলাট বেন্টিঙ্ক সেই বিধিনিষেধ ও বৈষম্য দূর করে ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।

বিচারসংস্কারসমূহ

(i) আইন সংকলন: লর্ড কর্নওয়ালিস-এর সময় তৈরি করা ফৌজদারি দণ্ডবিধি, শরিয়তি, হিন্দুবিধি প্রভৃতি আইনগুলিকে বেন্টিঙ্ক সংকলন করেন। তার উদ্যোগে ভারতীয় দণ্ডবিধি (Indian Penal Code) প্রবর্তিত হয়।

(ii) আদালত সংস্কার: তিনি প্রাদেশিক আপিল আদালত ও ভ্রাম্যমান আদালত তুলে দেন, এর বদলে এলাহাবাদে সর্বোচ্চ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করেন। আদালতের কাজকর্ম ফারসি ভাষার বদলে ইংরেজিতে চালু করা হয়। এ ছাড়া ভারতীয়দের দেওয়ানি মামলার বিচারক পদে নিয়োগ করেন বেন্টিঙ্ক। জেলা জজ-এর নাম বদলে সেশন জজ রাখা হয়।

বড়োলাট লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক শাসন ও বিচারসংস্কার দ্বারা ভারতীয় প্রশাসনকে প্রগতিশীল করে তোলেন।

আরও পড়ুনLink
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ১Click Here
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ২Click Here
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তরClick Here

Leave a Comment