সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্যসমূহ – স্কিনার বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর উপর সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের পরীক্ষাগুলি করে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করেছেন, সেগুলি নীচে হল-
সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্যসমূহ – স্কিনার বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর উপর সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের পরীক্ষাগুলি করে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করেছেন, সেগুলি হল-
প্রস্তুতি: অপারেন্ট অনুবর্তনের জন্য প্রাণীর পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন। এই পর্যায়ে প্রাণীর বিভিন্ন আচরণগুলিকে সুবিন্যস্ত করা প্রয়োজন। এই স্কিনারের পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রথমে ইঁদুরকে বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে আচরণ সৃষ্টির জন্য স্কিনার ইঁদুরটিকে প্রস্তুত করেছেন। শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে সক্রিয় অনুবর্তনকে কার্যকরী করে তুলতে হলে প্রারম্ভিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। যেমন- একজন শিক্ষার্থীকে কোনো বিষয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীকে সমস্যাসমাধানের উপযুক্ত করে তোলা। এই পর্যায়কে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রস্তুতি পর্যায় বলা যাবে।
আকৃতিদান বা বিন্যাসকরণ (শেপিং): যে পরিস্থিতিতে প্রাণী কাঙ্ক্ষিত আচরণ সম্পাদনের জন্য পর্যায়ক্রমে আচরণের শৃঙ্খলা তৈরি করে সেই পরিস্থিতিতে প্রাণীর আচরণের আকৃতিদানের চেষ্টা করা হয়। যেমন-স্কিনারের ইঁদুরের পরীক্ষায় ইঁদুরটিকে স্কিনার বক্সের মধ্যে ঢোকালে ইঁদুরটি যে আচরণগুলি সম্পাদন করবে অর্থাৎ ইঁদুরটি যে খাবারের জন্য ইতঃস্তত – ছোটাছুটি করবে এবং পরে যে মুহূর্তে তার পা বক্সের মধ্যে থাকা সুইচে – বা লিভারে পড়বে সেই মুহূর্তে খাবার ট্রে-তে চলে আসবে এইভাবে পরীক্ষাটি পুনরাবৃত্তি করলে পর্যায়ক্রমে ইঁদুরটির প্রচেষ্টার সংখ্যা কমতে থাকবে অর্থাৎ আচরণের পর্যায়ক্রমিক আকৃতিদান সম্ভব হয়। যাকে Shap-ing বা আকৃতিদান বলে। আকৃতিদানের ক্ষেত্রে স্কিনার তিনটি বৈজ্ঞানিক নীতির কথা বলেছেন। সেগুলি হল-
- সামান্যীকরণ : প্রাণী তার শিখনের যেগুলিকে পরবর্তী কোনো শিখনের কাজে লাগায়, তাকে সামান্যীকরণ বলে। স্কিনারের পরীক্ষায় ইঁদুরটিকে প্রতিবার পরীক্ষার সম্মুখীন করলে প্রত্যেকবারের শিখন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে সামান্যীকরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তাকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছুবার পুনরাবৃত্তি করার পরে পরীক্ষণীয় পরিস্থিতিতে আসলে ইঁদুরটি সঙ্গে সঙ্গে কাজে সফল হচ্ছে অর্থাৎ – খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করতে পারছে।
- প্রতিযোগী স্বভাব: পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে প্রাণী যে বিভিন্ন ধরনের আচরণের মধ্যে সঠিক আচরণটি জানতে পারলে অন্য যেসব আচরণ করে, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা হয় এবং অবশেষে ভুল আচরণগুলিকে পরিত্যাগ করে সঠিক আচরণটিকে পরবর্তী পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে কাজে লাগায়।
- খন্ডাংশের ধারাবাহিক শৃঙ্খল গঠন: পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে কোনো প্রাণী যে আচরণগুলি করে, সেগুলি টুকরো টুকরো শিখন শৃঙ্খলিত হয়ে সামগ্রিক শিখন সম্পন্ন হয়।
শক্তিদায়ক সত্তা : পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে সফল স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ একবার সম্পাদনের পর, যে উদ্দীপক শিক্ষার্থীর চাহিদা পরিতৃপ্ত করে, তাকেই শক্তিদায়ক সত্তা বলা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে শক্তিদায়ক সত্তা বলতে মূর্ত (পুরস্কার) বা বিমূর্ত (প্রশংসা) ইত্যাদিকে বোঝায়। স্কিনারের ইঁদুর ও স্কিনার বক্সের পরীক্ষায় খাদ্যবস্তু হল শক্তিদায়ক সত্তা, কারণ খাদ্য পাওয়ার জন্য ইঁদুরটির আচরণ সম্পাদনের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর বিশেষ কোনো আচরণ সম্পাদনের হারকে বাড়াতে গেলে শক্তিদায়ক সত্তার প্রয়োজন। স্কিনার শক্তিদায়ক সত্তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন-
- ধনাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা: যে উদ্দীপক কোনো প্রাণী বা শিক্ষার্থীর অপারেন্ট অনুবর্তনকে অনুপ্রাণিত করে, তাকে ধনাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা বলে।
- ঋণাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা: যে শক্তিদায়ক সত্তা কোনো প্রাণী বা শিক্ষার্থীর অপারেন্ট অনুবর্তনমূলক আচরণকে নিরুৎসাহিত করে, তাকে ঋণাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা বলে।
- শান্তিমূলক শক্তিদায়ক সত্তা: যে উদ্দীপক কোনো বিশেষ আচরণের অনুবর্তনকে বন্ধ করে দেয়, তাকে শাস্তিমূলক শক্তিদায়ক সত্তা বলে।
আচরণের স্বতঃস্ফূর্ততা: অপারেন্ট অনুবর্তনের মাধ্যমে প্রাণীর যে নতুন আচরণ সম্পাদিত হয়, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। যেমন- কোনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় অপারেন্ট অনুবর্তনের মাধ্যমে বিষয়টি শিখনের পর শক্তিদায়ক উদ্দীপক প্রয়োগ না করলে অনেকসময় প্রতিক্রিয়ার নির্বাপন হতে পারে। কিন্তু পুনরায় বিষয়টিকে অপারেন্ট অনুবর্তনের মাধ্যমে শেখানো হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিক্রিয়ার পুনরুদ্ধার ঘটে অর্থাৎ আচরণের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়। যেমন- কোনো বিষয়ের কোনো একক অপারেন্ট অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় শেখানোর পর অনেকদিন কোনো চর্চা না থাকলে এককটির ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তনের নির্বাপন ঘটেলও বিস্মরণ হয় না, পুনরায় অপারেন্ট অনুবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এককটিকে স্মরণে নিয়ে আসা যায়।
অবলুপ্তি: যখন প্রতিক্রিয়া ও শক্তিদায়ক সত্তার মধ্যে যথাযথ সম্পর্ক স্থাপিত হয় তখন অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলির অবলুপ্তি ঘটে। যেমন-কোনো বিষয়ের কোনো এককের পাঠদান করলে যেসব বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ, তাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়াগুলির সঙ্গে শক্তিদায়ক সত্তার সংযোগ স্থাপিত হয় যেগুলি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, অপরপক্ষে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলির অবলুপ্তি ঘটে।
অপারেন্ট শৃঙ্খল: অপারেন্ট অনুবর্তনের ক্ষেত্রে কয়েকটি অপারেন্ট শৃঙ্খল গঠনের মাধ্যমে জটিল আচরণ সম্পাদিত হয়। এই প্রক্রিয়া হল অপারেন্ট শৃঙ্খল রচনার প্রক্রিয়া। যেমন- শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করলে শিক্ষকের উচিত সহজ থেকে কঠিন, মূর্ত থেকে বিমূর্ত এই নীতি অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে সহজ থেকে কঠিন বা মূর্ত থেকে বিমূর্ত অংশে পৌঁছোতে বিভিন্ন অপারেন্ট অনুবর্তন ঘটে এবং যেগুলি শৃঙ্খল রচনা করে যথাযথ শিখনে সাহায্য করে।
সক্রিয়তা: সক্রিয় অনুবর্তনে প্রাণীর আত্মসক্রিয়তা প্রয়োজন। তা না হলে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শৃঙ্খল তৈরি হয় না।
আচরণের শক্তি হ্রাস বা বিলোপসাধন: ধনাত্মক উদ্দীপকের পরিবর্তে ঋণাত্মক উদ্দীপক উপস্থাপন করলে আচরণের শক্তি হ্রাস পায় বা বিলোপ ঘটে। লিভারে চাপ দেওয়ার পর খাদ্যবস্তুর প্রাপ্তি না ঘটলে ইঁদুরটির আচরণ সম্পাদন বন্ধ হয়ে যেত।
আচরণের স্বতঃস্ফূর্ততা: সক্রিয় অনুবর্তনে প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ প্রয়োজন, যা প্রাণী নিজের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে।
স্বতঃস্ফূর্ত পুনরাবির্ভাব: সক্রিয় অনুবর্তনে আচরণ সম্পাদনের শক্তি অবলুপ্ত হলে, প্রাণীটির উপর কিছুদিন আচরণ সম্পাদন বন্ধ রেখে পুনরায় একই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসে দু-একবার শক্তিদায়ক উদ্দীপক উপস্থাপন করা হলে প্রাণীটির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই আচরণের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
আরও পড়ুন | Link |
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ১ | Click Here |
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ২ | Click Here |
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |