একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টারে বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনায় ৫ নম্বর থাকবে। বিতর্কের আদলে বিতর্কের বিষয় এবং তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু যুক্তি দেওয়া থাকবে। পরীক্ষার্থীকে প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষের যুক্তিক্রম বিন্যাস করতে হবে। বিতর্কমূলক রচনায় যুক্তি-প্রতিযুক্তি সাজিয়ে মতের পক্ষে বা বিপক্ষে নিজের বক্তব্যকে অল্প কথায় লিখতে হবে।
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ২

বিজ্ঞাপন এ যুগে অপরিহার্য – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: আধুনিক, গতিশীল, বিশ্বায়নের এই যুগে নিজের ঢাক নিজে পেটানোই দস্তুর। আধুনিক কর্পোরেট দুনিয়া ব্যক্তিকেও প্রোডাক্ট মনে করে। নিজেকে বিজ্ঞাপিত না-করতে পারলে এযুগে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ নয়। নিজের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব কর্মদক্ষতা এবং উৎপাদিত পণ্যের বিজ্ঞাপন না-করলে বিপণন কঠিন হয়ে পড়ে। বিজ্ঞাপন জগৎ নিজেই এখন একটি বড়ো ব্যাবসা। এই জগতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কত মানুষের বুজি-রোজগার। মানুষকে বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করা ব্যাবসার একটি বিশেষ কৌশল। কেবল ব্যাবসা বা চাকুরি ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষা-সংস্কৃতির জগৎ থেকে রাজনীতির জগৎ পর্যন্ত সর্বত্র এখন বিজ্ঞাপনের চমক। এমনকি সমাজসেবামূলক জনসচেতনতার কাজেও বিজ্ঞাপন সহায়কের ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিজ্ঞাপনের জৌলুস। শুধু শহরের শিক্ষিত সমাজে নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও কোনো-না-কোনো মাধ্যম দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। টিভি বা খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের কথাই শুধু মনে রাখলে চলবে না। যেখানে যে উপায়ে সম্ভব সেখানে সেভাবে স্বপক্ষে প্রচার চালানোই বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে পরোক্ষ ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতিরও বিকাশ ঘটে। পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ অবহিত হতে পারে। প্রতিযোগিতার বাজারে বিভিন্ন সংস্থার একই বস্তুর বিজ্ঞাপন দেখে ক্রেতা তুল্যমূল্য বিচার করতে পারে। ফলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে। প্রকৃত বিজ্ঞাপন মানে বাড়িয়ে বলা বা মিথ্যে বলা নয়। কোনো বিজ্ঞাপন যদি মানুষকে প্রতারণা করার জন্য তৈরি হয় তবে তার দায় ওই নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনটির বা সেটির নির্মাতাদের। এর জন্য সমগ্র বিজ্ঞাপন বিষয়টিকে অপাঙ্ক্তেয় করে রেখে আধুনিক যুগে বিজ্ঞাপনের অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করা যায় না।
বিপক্ষে: বর্তমান যুগে বিজ্ঞাপন অপরিহার্য বিষয় হলেও, এই বিজ্ঞাপনের বেশ কিছু খারাপ দিকও আছে। যে-কোনো পণ্যের প্রচারকার্যের জন্য এবং সেই পণ্যের বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেক নিকৃষ্টমানের দ্রব্যকেও উৎকৃষ্ট বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। বিজ্ঞাপনের মিথ্যে চটকদারিতে পা দিয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়। বর্তমানে বিজ্ঞাপন জগৎটা একটা বড়ো ব্যাবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো দ্রব্য মানুষের জন্য উপকারী বা প্রয়োজনীয় হলে তার উপকারিতার কথা মানুষের মুখে মুখেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর জন্য বিজ্ঞাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মূলত বিজ্ঞাপনদাতার মুনাফা লাভের ব্যাপারটাই জড়িয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনকে চিত্তাকর্ষক করতে গিয়ে মাঝে মাঝে এমন কিছু বিষয়ের প্রদর্শন করা হয় যা অশ্লীলতারই পরিচয় দেয়। এইসব বিজ্ঞাপন কমবয়সি ছেলেমেয়েদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিজ্ঞাপন যেন চতুর কৌশলে মানুষের মন ভোলানোর জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে। অনেক বিজ্ঞাপন নিকৃষ্টমানের দ্রব্যকে জনপ্রিয় করার জন্য, সেগুলি বিক্রির উদ্দেশ্যে যেনতেন প্রচার অবলম্বন করে কার্যসিদ্ধি করতে চায়। বিজ্ঞাপন অনেকসময় সমাজসংস্কৃতিকে বিপথে চালনা করে। যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়োজনীয় সেসব দ্রব্য এমনিই বিক্রি হবে, তারজন্য বিজ্ঞাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই বিজ্ঞাপন এ যুগের অপরিহার্য বিষয়, তা না-করলে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করা যায় না, এ কথা মেনে নেওয়া যায় না। তবে উৎপাদিত পণ্যের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন করতে হলে তা সৎ, স্বচ্ছ ও যথাযথ হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
পরিবেশকে ধ্বংস করার মূলে যান্ত্রিক সভ্যতার লাগামছাড়া উন্নয়ন – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: আমাদের পরিবেশ আজ দূষণভারে জর্জরিত। যান্ত্রিক সভ্যতার লাগামছাড়া উন্নয়ন পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নেয়। বড়ো বড়ো বাড়ি, ফ্ল্যাট, জনপদ গড়ে তোলার জন্য নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে মানুষ। অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রকৃতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে দূষণের মাত্রা। যেখানে ভূভাগে পঞ্চাশ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল অরণ্য সেখানে আজ সেই সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে পঁয়ত্রিশ শতাংশে। এ ছাড়া যানবাহন, কলকারখানা প্রতিনিয়ত পরিবেশদূষণ বাড়িয়ে চলেছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এই কার্বন ডাইঅক্সাইড বাড়ার ফলে তা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকেও বাড়িয়ে চলেছে। বিজ্ঞানীরা এ কথা প্রমাণ করেছেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বায়ুদূষণ ছাড়াও জলদূষণ, শব্দদূষণ এগুলির মাত্রাও যত দিন যাচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যন্ত্রের দাপাদাপি এবং তার থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাসের ফলে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের ওজোনস্তরে ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। ধরিত্রীকে প্রতিনিয়ত নানাভাবে দূষিত করে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ে মানুষ আজ নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে এনেছে। যান্ত্রিক এই সভ্যতার যত উন্নয়ন ঘটছে পরিবেশ, প্রকৃতি তত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেই পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনছে।
বিপক্ষে : যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষকে যাবতীয় আরাম ও সুখস্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করেছে। মানুষকে বর্বর জীবন থেকে সভ্য জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে এই যান্ত্রিক সভ্যতা। একসময় অরণ্যচারী মানুষ নিজের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য লড়াই করেছে। সে প্রতিনিয়তই ভেবেছে এই সমস্ত কিছুকে কীভাবে সে করায়ত্ত করবে, কীভাবে এই বর্বর জীবন কাটিয়ে সে সভ্য হবে। আর তার এই ভাবনা তাকে করে তুলেছে উন্নয়নমুখী। মানুষ নিজেই এগিয়ে গেছে উন্নয়নের পথে। সমাজ সংসার গড়ে, শিল্প আর প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে মানুষ অগ্রসর হয়েছে সভ্যতার পথে। মানুষ শিক্ষাদীক্ষায়, বিজ্ঞানে নিজেদের উন্নতি ঘটিয়ে গড়ে তুলছে এক সভ্য সমাজ। একইভাবে মানুষ ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিজের সমাজকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যে সমৃদ্ধ করেছে। মানুষের এই এগিয়ে চলার গতিকে স্তব্ধ করে দেওয়া কখনোই বিজ্ঞানসম্মত হতে বনা। মানুষের জীবনে বিজ্ঞান ও পারে প্রযুক্তিবিজ্ঞানের গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। বর্তমান এই যুগও হল যন্ত্রনির্ভর। প্রযুক্তিবিজ্ঞানে উন্নত শীর্ষ থেকে সব কিছুকে দূরে সরিয়ে আবার আরণ্যক জীবনে ফিরে যাওয়া মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। সভ্য মানুষ আবার বর্বর জীবনে ফিরে যেতে পারে না। এ কথা ঠিক। কিন্তু উন্নয়নকে চলমান রেখেই আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখার কথা ভাবতে হবে। শিল্প এবং কৃষির বিকাশের পাশাপাশি, কলকারখানাও গড়ে উঠবে; এটাই বাস্তব সত্য। তাই উন্নয়নকে স্তব্ধ করে নয়, তাকে চলমান রেখেই পরিবেশকে সুস্থ রাখাই একজন সুসভ্য মানুষের দায়িত্ব।
বাংলা নয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই দেশের ভবিষ্যৎ – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এ কথা চরম সত্য যে, ইংরেজি ছাড়া আমাদের গতি নেই। পড়াশোনা হোক কিংবা পেশাগত কারণ যে-কোনো ক্ষেত্রেই ইংরেজি ভাষাটা ভালোভাবে না-জানলে আমরা এক পা-ও এগোতে পারব না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে যদি আমরা পরিচিত হতে চাই তাহলে ইংরেজি ছাড়া কোনো গতিই নেই। হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির বাইরে ইংরেজি দ্বারা আমরা সংযোগস্থাপন করতে পারি না কারণ সেক্ষেত্রে সংযোগস্থাপনের একমাত্র ভাষাই হল ইংরেজি। শিক্ষার এবং চাকরির ক্ষেত্রে যদি ইংরেজি ভাষাই একমাত্র সম্বল হয় তাহলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি ছাড়া কোনো গতি নেই। ইংরেজি ভাষাকে জীবনযাপনের মাধ্যম করে তুলতে এই স্কুলগুলিই একমাত্র ভরসা। পাঠ্য বিষয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য নানারকম বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হয় এই স্কুলগুলিতে। একটি ছেলেকে যুগোপযোগী এবং স্মার্ট বানাতে এই স্কুলগুলির অন্যতম একটা একটা ভূমিকা রয়েছে। একসময় পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি শিক্ষাকে তুলে দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র মাতৃভাষার শিক্ষাদানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এর পরিণতি অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল। তাই আবার ইংরেজিকে ফিরিয়ে আনা হয়। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে শুধুমাত্র মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ফলে ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে দক্ষ হয় না। ইংরেজিতে কথা বলতেও তাদের অনেকসময় সমস্যা হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা বা চাকরিজীবনে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লে এই সমস্যাগুলি হয় না। পড়াশোনা বা চাকরির ক্ষেত্রে তাদের কাছে ইংরেজি ভাষা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তাই এ কথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই যে দেশের ভবিষ্যৎ এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিই।
বিপক্ষে: ইংরেজি ভাষা শেখা দরকার সে-কথা না-হয় সত্যি। কিন্তু বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে ইংরেজি শেখা যায় না, ইংরেজিতে কথা বলা যায় না, এ কথা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং যুক্তিহীন। ইংরেজি মাধ্যমে পড়েও অনেক ছেলেমেয়েই অশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলে। আবার বাংলা মাধ্যমে পড়ে ইংরেজিতে নিজের মাতৃভাষার মতোই পারদর্শী এরকম অনেক ছেলেমেয়েই আমরা দেখি। বরং ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা নিজের মাতৃভাষাটিকে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে না। বাংলা মাধ্যমে পড়ে বাংলা এবং ইংরেজি দু-ভাষাতেই ছেলেমেয়েরা পারদর্শী হয়। তাই যুগের চাহিদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, এ কথা না-বলে বরং যুগের হুজুগ বলা ভালো। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি ছেলেমেয়েদের শৈশব কেড়ে নেয় এবং তাদের নিজেদের মাতৃভাষাকে ভুলিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। প্রচুর টাকার বিনিময়ে এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আজ শিক্ষাকে এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি পণ্যে পরিণত করেছে। কোনোদিন দেশীয় মূল্যবোধে চরম আঘাতও আনতে পারে এই স্কুলগুলি। উচ্চশিক্ষার জন্য শুধুমাত্র ভালো ইংরেজি জানতে হবে এ কথা ঠিক নয়। জার্মানি, রাশিয়া ইত্যাদি উন্নত দেশে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি নয়। অথচ এদেশে অনেক তরুণ-তরুণী অশুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বললেও বাংলায় কথা বলে না। আত্মঘাতী বাঙালি ছাড়া এদেরকে আর কিই-বা বলা যায়। ইংরেজি জানা দরকার এ কথা ঠিক কিন্তু নিজের মাতৃভাষাকে ভুলে – নয়। ইংরেজিকে অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই, তবে ইংরেজি শেখার জন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই শেষ কথা এ কথা কখনোই বলা যায় না। তাই দেশের ভবিষ্যৎ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি এ কথা কখনোই যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
আধুনিক জীবনে বৃদ্ধাবাস অপরিহার্য – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: আধুনিক সভ্যতায় অধিকাংশ পরিবার ছোটো পরিবার। বেশিরভাগ পরিবারে সন্তানসংখ্যা একটি। আবার শিক্ষা ও জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই পাড়ি দেয় বিদেশে। যাদের সন্তান দীর্ঘকাল বা আজীবন বিদেশে থাকতে বাধ্য হয় বা স্বেচ্ছায় বেছে নেয় প্রবাসী জীবন, তাদের পিতা-মাতার জীবনে নিত্যসঙ্গী একাকিত্ব, যা প্রবাসী সন্তানকেও চিন্তিত করে তোলে।
বৃদ্ধবয়সে অবসর যাপনের জন্য প্রয়োজন সমবয়স্ক সঙ্গীর। বৃদ্ধাবাসে প্রায় কাছাকাছি বয়সের অনেক মানুষ একত্রে থাকে। পারস্পরিক সাহচর্য তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সুতরাং সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে একাকিত্বের যন্ত্রণা ভোগ না-করে বয়স্ক মানুষের বৃদ্ধাশ্রমবাসের সিদ্ধান্তই শ্রেয়।
বিপক্ষে: আধুনিক জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এখন প্রত্যেকেই ভীষণভাবে ব্যস্ত, এ কথা ঠিক। ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে; মা-বাবাকে ছেড়ে কেউ শহরের বাইরে তো কেউ বিদেশে পাড়ি দেয়, এ কথাও অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। কিন্তু এসব কিছুর জন্য বৃদ্ধ মা-বাবার জায়গা যে বৃদ্ধাশ্রম হবে, এ কথারও কোনো সারবত্তা নেই। কারণ নিজের সবটুকু দিয়ে মা-বাবা ছেলেমেয়েদের মানুষ করে। তারা নিজের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের কথাটুকুও ভাবে না। অথচ সেই ছেলেমেয়েরাই বড়ো হয়ে মা-বাবার প্রতি নিজেদের সমস্ত দায়দায়িত্ব এড়ানোর জন্য তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে, এই মানসিকতাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। সন্তানের তার মা-বাবার প্রতি যে দায়বদ্ধতা তা সে কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। একাকিত্বের যন্ত্রণা থেকে মা-বাবাকে মুক্তি দিতেই তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর এই অজুহাত সন্তানদের স্বার্থপর ও সংকীর্ণ মানসিকতাকেই তুলে ধরে। ছেলেমেয়েদের মানুষ করার পাশাপাশি প্রত্যেক মা-বাবারা স্বপ্ন দেখেন বুড়ো বয়সে সন্তান-নাতি-নাতনি-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ জীবন কাটানোর। কিন্তু বৃদ্ধাবাসে পাঠিয়ে তাদের এই স্বপ্নকে ভেঙে দেওয়ার মতন নিষ্ঠুর কাজটাই করে সন্তানেরা। বাড়িতে নিজের সন্তান কিংবা পোষ্য প্রাণীদের জায়গা হলেও মা-বাবাকে জায়গা তাঁরা দিতে পারে না। অথচ সন্তানরা ভেবে দেখে না তাদেরও ছেলেমেয়ে আছে, এই নিষ্ঠুর ভবিতব্য তাদের জন্যেও অপেক্ষা করে আছে। একাকিত্ব কাটাতে সন্তানরা তাদের মা-বাবাকে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবপূর্ণ এক পরিচিত পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়, এক সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে। তারা এটা ভেবে দ্যাখে না মা-বাবার একাকিত্ব দূর করতে তাদেরকে অন্য আর-এক একাকিত্বে নির্বাসিত করা হচ্ছে। এতটা নিষ্ঠুর কাজ করা এক চরম অমানবিকতার নিদর্শন। তাই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতন এই হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।
বিজ্ঞানের যুগে সাহিত্যের আর কোনো প্রয়োজন নেই – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়ে এ কথা আমরা নির্দ্বিধায় বলতেই পারি এখন আর সাহিত্যের কোনো প্রয়োজন নেই। সাহিত্য মানুষের অবসর বিনোদনের যদিও একটা মাধ্যম কিন্তু এই ইঁদুরদৌড়ের যুগে মানুষের যখন আর কোনো অবসরই নেই তখন আর সাহিত্যেরও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। যদি কোনো বিখ্যাত উপন্যাস যেমন ‘চাঁদের পাহাড়’ বা ‘পথের পাঁচালী’ কারোর দেখার ইচ্ছেই হয় তাহলে সিনেমাতেই তা দেখে নেওয়া যায়। উপন্যাসের থেকে কম সময়ে সিনেমাটা দেখে নিলেই উপন্যাসের বিষয়বস্তুও জানা হয়ে যাবে। এ ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি যেটা সাহিত্য নিয়ে পড়লে নেই। সাহিত্য নিয়ে পড়লে চাকরির সুযোগ অনেকটা কমে আসে। শুধুমাত্র শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না সাহিত্যের ছেলেমেয়েদের। কবিতা লিখে বা সাহিত্যচর্চা করে কার কি-বা লাভ হয়েছে। যুগধর্ম যদি আমরা মেনে নিই তাহলে কেরিয়ার নির্ভর পড়াশোনা করে নিজেদের ভবিষ্যৎ সংরক্ষিত করাটা অনেক বেশি জরুরি। সাহিত্য কেউ ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আগে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাওয়াটা বেশি দরকার। কর্মজীবনে প্রবেশ করে সাহিত্যচর্চা করতেই পারে যে কেউ। তাহলে দু-দিকই বজায় থাকে। বিজ্ঞান যে-কোনো মানুষের জীবনে অনেক বেশি কার্যকারী, সাহিত্য নয়। বিজ্ঞান মানুষকে অনেক সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে যা সাহিত্য দিতে পারেনি। সাহিত্য মানুষের কল্পনাবিলাসিতাকে প্রশ্রয় দেয়, বাস্তব জীবনে যার কোনো মূল্য নেই। তাই বাস্তব দিক থেকে বিচার করলে সাহিত্য নয় বিজ্ঞানই মানুষের জীবনে বেশি প্রয়োজনীয়।
বিপক্ষে : মতের পক্ষে দলীয় বন্ধুরা বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়ে মানবজীবনে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা এই সব কিছুর ভূমিকাকে অস্বীকার করলেন। কিন্তু এই যন্ত্রসভ্যতার যুগে দাঁড়িয়ে সারাদিন বিজ্ঞানের চর্চা করলে মানুষ রোবট হয়ে যাবে। বিজ্ঞান যদি মগজের বিষয় হয় তাহলে সাহিত্য হৃদয়ের। বিজ্ঞান আর সাহিত্য এই দুই-এর মিলনেই একজন মানুষ সম্পূর্ণ হয়। মানুষের মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলে সাহিত্য। একদিকে মানুষের মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে এ কথা বলা এবং অন্যদিকে সাহিত্যকে অপ্রয়োজনীয় বলা, এটা হল ভয়ংকর এক স্ববিরোধিতা। একটি ছেলে বা মেয়ে বিজ্ঞানের পাশাপাশি যদি একটু সাহিত্যচর্চাও করে, তাতে কোনো সমস্যা হয় না, কারণ এরা পরস্পরের পরিপূরক। আর আধুনিক সভ্যতায় এটাই কাঙ্ক্ষিত। জীবনের যে সুন্দর দিক তার সন্ধান দেয় সাহিত্য। মানুষ নিজের মানসিক শান্তি খোঁজে সাহিত্যচর্চার মধ্যে। মানুষের মধ্য থেকে সত্য-সুন্দর এই সব কিছু হারিয়ে গেলে মনুষ্যত্বেরই বিপর্যয় ঘটবে। ভবিষ্যতে ভালো চাকরি পাব বলে শুধুমাত্র বিজ্ঞানচর্চা করব, সাহিত্য নয়-এই যুক্তি সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন। সাহিত্যেও আজ নানারকম চাকরির সুযোগ আছে। শুধু শিক্ষকতাই নয় সাহিত্য নিয়ে পরে সাংবাদিকতা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও ছেলেমেয়েরা চাকরি পেতে পারে। সাহিত্য মানুষের সুস্থ রুচিবোধ গড়ে তোলে। মানুষের অনুভূতি, কল্পনার দিকটি খুলে দেয় সাহিত্য। আর কোনো অনুভূতি বা কল্পনাবিহীন মানুষ একটি যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। যে পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ নেই, শেকসপিয়র নেই সেই পৃথিবীতে কোনো সুখ নেই, মানসিক শান্তি নেই। বিজ্ঞান আর সাহিত্যের মিলনেই গড়ে ওঠে একটা নতুন সমাজ। জীবনে সাহিত্যের প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা হয়তো নেই, কিন্তু আদর্শবাদ-রুচিবোধের জন্ম দেয় সাহিত্য। চিন্তার রসদ ও মনের শান্তির খোঁজ দেয় সাহিত্য। মানুষ ভেঙে পড়া মন নিয়ে শক্তির সন্ধানে ছুটে যায় সাহিত্যের কাছেই। তাই যদি আমরা একটা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাই তাহলে কোনোটিকে বাদ দিয়ে নয়, বিজ্ঞান আর সাহিত্য এই দুইয়ের সমন্বয়েই গড়ে তুলতে হবে সুস্থ শান্তিপূর্ণ আধুনিক সমাজ।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: প্রাচীনকালে শিক্ষাব্যবস্থা যেরকম ছিল, এখন তার বদল ঘটেছে। সমাজ বিবর্তনের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থারও বিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষাব্যবস্থা এখন আর শুধুমাত্র গুরুগৃহেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তা বহির্বিশ্বে পাড়ি দিয়েছে। আর শিক্ষাব্যবস্থার এই পরিবর্তন এবং উন্মুক্ত হওয়ার পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের কল্যাণেই শিক্ষাব্যবস্থা তার বন্দিদশা কাটিয়ে উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থা প্রথমে ছিল শৌখিন। তা শুনে শুনে মনে রাখতে হত। যাত্রা, কবিগান, পাঁচালি এগুলিই ছিল আগেকার শিক্ষার মাধ্যম। ছাপাখানা আবিষ্কারের পর শিক্ষাব্যবস্থার মৌখিক দশা ঘুচল। এরপর একে একে আবিষ্কার হল বেতার, দূরদর্শন আর আধুনিক যুগে চলে এল ইনটারনেট। এই সবকটি মাধ্যমই শিক্ষাব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করল। শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সংবাদপত্র সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি রাজনীতি, খেলাধুলার ব্যাপারে জানতেও শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে। এমনকি কোথায় কী বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়, কোন্ বিষয়ে চাকরির সুযোগ কতটা, কোন্ বিষয়ে ভবিষ্যতে কী করা যায় এইসব বিষয়ে জানতেও ছেলেমেয়েদের সাহায্য করে সংবাদপত্র। শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনের দিশা খুঁজে পেতে সাহায্য করে সংবাদমাধ্যম। লোকশিক্ষার প্রসার রেডিয়ো দিয়ে শুরু হলেও তাকে চাক্ষুষ দেখতে সাহায্য করল দূরদর্শন। দূরদর্শনে কুইজ থেকে শুরু করে, পরীক্ষার প্রস্তুতি-বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলি ছেলেমেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়া শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল যেমন জিয়োগ্রাফিক, অ্যানিমেল প্ল্যানেট-এগুলি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে। দূরদর্শনে শিক্ষামূলক চলচ্চিত্রও দেখানো হয়। অন্যদিকে ইনটারনেটের কথা যদি বলি তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে এর অবদান অনস্বীকার্য। ইনটারনেটের দৌলতে এখন গোটা পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ইনটারনেটের সাহায্যে যে-কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা এবং গণমাধ্যম যথার্থ অর্থেই একে অন্যের পরিপূরক সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। বর্তমান যুগে তাই গণমাধ্যম ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থাকে কল্পনা করা যায় না। নিয়েছে
বিপক্ষে: শিক্ষাক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রভাব যথেষ্ট এ কথা স্বীকার না-করে উপায় নেই। কিন্তু ভালো দিকের পাশাপাশি গণমাধ্যমের অনেক খারাপ দিকও আছে। নানারকম বিজ্ঞাপন কিংবা সামাজিক অপরাধের বিস্তারিত এবং বিকৃত প্রদর্শনে ছাত্রসমাজ বিভ্রান্ত হয়। নানারকম মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে। কিছু এমন অনুষ্ঠানের প্রদর্শন করা হয় যেগুলি দেখার ফলে ছাত্রছাত্রীর বিপথে যাওয়ার বহুল সম্ভাবনা থাকে। রাজনীতি অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ওপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। আগে যখন গণমাধ্যমের এত রমরমা ছিল না, তখন প্রচলিত পাঁচালি, লোকগান, কবিগান এগুলিই ছিল গণমাধ্যম। আর শিক্ষার্থীরা এখন দূরদর্শন, ইনটারনেটের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে এগুলি ছাড়া তারা এক পাও এগোতে পারে না। শুধুমাত্র শিক্ষামূলক চ্যানেল নয়; অন্য নানারকম চ্যানেল, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন এবং প্রচলিত নানারকম অনুষ্ঠান ছেলেমেয়েদের ওপর কুপ্রভাব বিস্তার করে। তাই যদি গণমাধ্যমের সুফলের পাশাপাশি কুফলের দিকটি মাথায় না-রাখি, তাহলে শিক্ষার্থীদের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয় – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীর মান নির্ণয় এর মাপকাঠি হলেও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে তা সর্বদা প্রাধান্য পায় না। পরীক্ষার সাফল্য বা ব্যর্থতা অভিভাবকদের কাছে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়ার ফলে তা শিক্ষার্থীদের জীবনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। ফলে আশানুরূপ ফল না-পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জীবন সম্পর্কে উদাসীন ও হতাশ হয়ে জীবনহানিকর সিদ্ধান্তের শিকার হয়। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা পরীক্ষায় সাফল্যকে শুধুমাত্র গুরুত্ব না-দিয়ে নিজ নিজ দক্ষতায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘তোতাকাহিনি’ রচনায় এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, শিক্ষা বোঝা নয়, শিক্ষার আনন্দই মুখ্য। পাঠ্যপুস্তকের সীমাবদ্ধ জগতের বাইরে যে সীমাহীন জ্ঞানভাণ্ডার বিরাজিত, শিক্ষার্থীকে সেই মুক্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। তাই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর জীবনের শেষ কথা বলে না।
বিপক্ষে : মতের পক্ষে জানা গেল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীর সাফল্যের মাপকাঠি নির্ণয় করে না বা তার ভবিষ্যৎ জীবন নির্ধারণ করে দেয় না। কিন্তু এ কথা সকলেই জানে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর তাদের প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করে দেয় তাদের কর্মজীবন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরই তাদের চাকরি জীবনে সাফল্য নিয়ে আসে। কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। যে-কোনো ভালো স্কুল বা কলেজে ভরতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরটি বেশি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নম্বরের শতাংশের ওপরেই একটি ছেলে বা মেয়ের কোনো ভালো কলেজে ভরতি নির্ভর করে। ভালো নম্বর না-পাওয়ায় অনেকে অনার্স নিয়ে পড়ার সুযোগও হারায়। তাহলে এটা আমরা বলতেই পারি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরই সাফল্যের মাপকাঠি। এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, বৃত্তিমূলক পরীক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হয়। আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় কম নম্বরের জন্য যাদের নাম তালিকার শেষের দিকে থাকে অনেক সময় তারা ভরতি হতে পারে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এটা বলতেই পারি চাকরির ক্ষেত্রেও সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে পরীক্ষার নম্বরকেই ধরা হয়। প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষায় কম নম্বর প্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের নাম মেধাতালিকায় না-থাকায় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বঞ্চিত হয়। চাকরি না-পাওয়ার ব্যর্থতায় তারা হতাশায় ভুগতে থাকে। এমনকি হতাশার বশবর্তী হয়ে অনেকে নিজেদের জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেয়। তাই বাস্তব পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এবং এই সমস্ত দিক বিচারবিশ্লেষণ করে এ কথা আমরা অবশ্যই বলতে পারি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বর্জন করা জরুরি – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি একটি পরিচিত বিষয়। ছাত্র আন্দোলন দেশকে দিশা দেখায় এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের বিষয়টি নতুনভাবে বিবেচনা করে দেখার সময় এসেছে। বর্তমান ছাত্র আন্দোলন বেশিরভাগ সময় দিশাহীন। কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয় নানারকম বিশৃঙ্খলতা আর অরাজকতা। গন্ডগোলের এই উত্তাপ শুধুমাত্র কলেজের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না তা ছড়িয়ে পড়ে বাইরেও। মারপিট, বিশৃঙ্খলতা এ সব কিছুও হয়ে থাকে। এত কিছুর পর মনে হয় এই আন্দোলন এই রাজনীতি কীসের জন্য? যেখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই, শান্তি নেই সেই রাজনীতি করা বৃথা। রাজনীতি করার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী বিপথগামী হচ্ছে। তারা পড়াশোনা না-করে সারাক্ষণ রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকছে। কলেজে মানুষ উচ্চশিক্ষার জন্য ভরতি হয়, নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে তারা কলেজে আসে। কিছু পড়াশোনার বদলে ছাত্র রাজনীতি করে তারা নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে। শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা এবং সেমিনারের বদলে যেসব কলেজে রাজনীতি নিয়েই বেশি সময় কাটে সেইসব প্রতিষ্ঠানের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া রাজনীতিতে পেশিশক্তির প্রকাশ ছাত্র রাজনীতিতেও দেখা যায়। ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে নষ্ট করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান ছাত্র রাজনীতির মূল্যবোধে ভীষণরকম অবক্ষয় ঘটেছে। রাজনীতির তাণ্ডবে শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা মেনে চলাও অর্থহীন হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও, রাজনীতির তাণ্ডবে ছাত্রছাত্রীকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হবে এই সমস্ত দাবি অন্যায়। যারা রাজনীতি করতে চায় না পড়াশোনা করতে চায় তাদের পড়াশোনা করতে দিতে হবে। রাজনীতিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া এবং তার তাণ্ডব সহ্য করা কোনো মতেই উচিত না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি বর্জন করলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব।
বিপক্ষে: ছাত্র আন্দোলন বহু যুগ ধরেই সমাজকে ও দেশকে দিশা দেখাচ্ছে। ছাত্র আন্দোলনই সন্ধান দেয় নতুন পথের। নতুন সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন ছাত্র আন্দোলনই দেখিয়ে থাকে। তাই রাজনীতি আদর্শহীন, তাই ছাত্র রাজনীতি বর্জন করা উচিত এ কথা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন। সচেতন শিক্ষিত ছাত্রদের সবসময় রাজনীতিতে এগিয়ে আসা উচিত। ভালো শিক্ষিত ছাত্ররা যদি রাজনীতিতে এগিয়ে না-আসে তাহলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব চলে যাবে কিছু অশিক্ষিত ও মূর্খ মানুষের হাতে। আর এটা হলে যে-কোনো সমাজ আরও অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি থাকলে সেখানে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হবে না এ কথা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। আর রাজনীতি করলেই মূল্যবোধের অভাব হবে এ কথাও মেনে নেওয়া যায় না। ছাত্রদের মধ্যে যে অদম্য সাহস, মানবিকতা বোধ, প্রাণময়তা লুকিয়ে আছে সেই সব কিছুর ওপর ভরসা রেখেই ছাত্ররা যদি রাজনীতিতে এগিয়ে আসে তাহলে একটা দেশ এবং একটা রাজ্যেরই উন্নতি হবে। রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধুমাত্র পড়াশোনা করে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখলে ছাত্রছাত্রীরা হয়ে উঠবে আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর। ফলে ছাত্ররা নিজের দেশের কথা, সেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেও ভুলে যাবে। যৌবনের উত্তাপ ছাত্ররাজনীতিতে একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া নিজের দেশকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে এবং সামাজিক সম্পর্ককে ঠিক পথ দেখাতে যৌবনশক্তি অর্থাৎ ছাত্র আন্দোলনের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে।
আরও পড়ুন | Link |
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ১ | Click Here |
তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |