একাদশ শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টারে বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনায় ৫ নম্বর থাকবে। বিতর্কের আদলে বিতর্কের বিষয় এবং তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু যুক্তি দেওয়া থাকবে। পরীক্ষার্থীকে প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষের যুক্তিক্রম বিন্যাস করতে হবে। বিতর্কমূলক রচনায় যুক্তি-প্রতিযুক্তি সাজিয়ে মতের পক্ষে বা বিপক্ষে নিজের বক্তব্যকে অল্প কথায় লিখতে হবে।
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা

প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
জীবিকার আদর্শ স্থান বিদেশ – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: ছাত্রজীবনের লক্ষ্য জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। নিজের শিক্ষা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থান। প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ চায় উন্নত জীবনযাপন করতে। তাই এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, বিদেশই হল জীবিকার আদর্শ জায়গা।
বিদেশের চাকরি যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি জীবনকে উপভোগের সুযোগও সেখানে অফুরন্ত। দেশের ক্ষুদ্র গন্ডির বাইরে যে আড়ম্বরপূর্ণ একটা জগৎ আছে তাকে চিনতে হলে বিদেশকেই অগ্রাধিকার দিতে হয়।
বিদেশের চাকরি শুধু নিজের কাছে নয়, অভিভাবকদের কাছেও আকর্ষণীয়। আত্মীয় ও বন্ধুমহলেও তা এনে দেয় জনপ্রিয়তা। সুতরাং দেশপ্রেমের মিথ্যে মোহে একঘেয়ে জীবন না-কাটিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখাই শ্রেয়।
বিপক্ষে: প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষিজাত পণ্যে পরিপূর্ণ এই দেশে কাজের সুযোগ নেই-এ কথা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। বিদেশের কেবল ঝাঁ চকচকে পরিবেশ দেখে অনেক সময় আমাদের মন ভুলে যায়, কিন্তু সেখানকার জীবন অনেক বেশি যান্ত্রিক। আর জীবনের উদ্দেশ্য শুধুই অর্থ উপার্জন নয়। একটু বিচার করলে দেখা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী বহুজাতিক সংস্থাগুলি যখন ভারতে বাজার ধরার চেষ্টা করছে, তখন ভারতের লোকজন বিদেশের মোহে আচ্ছন্ন। যেসব মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবনের হাতছানিতে স্বার্থপরের মতো বিদেশে পাড়ি দেয়, তা থেকে তাদের স্বদেশপ্রীতির কোনোরকম পরিচয় পাওয়া যায় না। কারণ এখন সব দেশেই কাজের সুযোগ আছে। শুধু সেই সুযোগ খুঁজে নিতে হয়। শুধু বিদেশ নয় দেশেও নানারকম বড়ো বড়ো কোম্পানি রয়েছে আর সেখানে কাজের পরিবেশও রয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকলে দেশে বসেও ভালো রোজগার করা যায়। সীমাহীন অর্থ উপার্জনের নেশা যাদের মধ্যে কাজ করে তারাই নিজের দেশকে ছেড়ে বিদেশকে আপন করে নেয়। সেখানে গিয়ে থিতু হওয়ার চেষ্টা করে। তবে অন্যের দেশ তাকে কখনও আপন করে নেয় না। কিন্তু যে দেশে মানুষ জন্মেছে নিজেদের জীবিকার আদর্শ স্থান হিসেবে তাদের সেই দেশকেই গড়ে তোলা উচিত। যে দেশ সবথেকে কম খরচায় মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালায় সেই দেশে বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণার কোনো সুযোগ নেই, আজ এ কথা হাস্যকর শোনায়। তাই অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে গমন, মিথ্যে মোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুযোগ নিজের দেশেও যথেষ্ট রয়েছে। বিদেশে যদি ‘নাসা’ থাকে তাহলে এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে ‘ভাবা’ রয়েছে। যে দেশের জল-হাওয়ায় আমরা বেড়ে উঠেছি সেই দেশকে ভালোবেসে যদি একটু খুঁজে দেখি; তাহলে দেখব বিদেশের থেকে কোনো অংশে এই দেশ পিছিয়ে নেই। সম্মানজনকভাবে রোজগারের সুযোগ নিজের দেশেও যথেষ্ট, তার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কৃষি নয়, শিল্পই রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এ কথা আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি দেশ শুধুমাত্র সুজলাসুফলা হয়ে কোনো লাভ নেই, একুশ শতকের সূচনায় শিল্পই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। যে-কোনো দেশে শিল্পই সেই দেশের উন্নতির ভিত্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই এ কথা আমরা বুঝতে পারি। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ শিল্প। আমাদের দেশে শিল্পের বিকাশের হার কৃষির বিকাশের হারের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প করতে গেলে কৃষিজমির হ্রাস ঘটবে এ কথা চিরন্তন সত্য। আমাদের দেশে অনেক অনাবাদী, পতিত জমি রয়েছে যেগুলি শিল্পের কাজে ব্যবহার করা যেতেই পারে। অনাবাদী জমি ছাড়াও যদি আমরা চাষযোগ্য জমিতে শিল্পস্থাপন করতে চাই সেক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হলে আর কোনো সমস্যাই থাকে না। এ দেশে অনেকেই কৃষির ওপর নির্ভরশীল এ কথা বলে আমরা শিল্পকে দূরে সরিয়ে দিতে পারি না। কৃষির তুলনায় শিল্পে আয়ের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া ভালো কিন্তু এমন গুরুত্ব দেওয়াও উচিত নয়, যার ফলে শিল্পের ক্ষতি হয়। কৃষির সঙ্গে শিল্পের কোনো বিরোধিতা নেই। > মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কম শতাংশ লোক কৃষিকার্যের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু তা > সত্ত্বেও খাদ্যশস্য রপ্তানিতে তারা প্রথম শ্রেণির দেশগুলির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। শিল্পের জন্য কৃষির কখনও ক্ষতি হয় না। শিল্পে উন্নত দেশ হলে সেই দেশ কৃষির গুরুত্ব হারাবে এ কথা ঠিক নয়। কৃষিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে শিল্পের বিরোধিতা করলে সেই দেশ কোনোদিন এগোতে পারবে না। বরং শিল্পে উন্নত দেশগুলি, শিল্পে অনুন্নত দেশের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে যাবে।
বিপক্ষে: দেশের মানুষের কৃষিনির্ভরতাকে যদি অস্বীকার করে শিল্পকেই ভবিষ্যৎ ভাবা হয়; তাহলে দেশের মানুষের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। শিল্পবিকাশের হার কৃষির তুলনায় বেশি হলেও কৃষির উপযোগিতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা দেশ উন্নতি করবে, অথচ সেই দেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভর হবে না, এ কথা ভাবা কোনো সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। শিল্পের বিনিময়ে কৃষকের বিকল্প আয় খুঁজে দেওয়া কিংবা চাষযোগ্য জমিতে শিল্পস্থাপনের বিনিময়ে কৃষককে তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনেক কথা বলা হলেও, বাস্তবে তা করা হয় না। এমনকি কৃষককে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি না-দেওয়ার নজিরও যথেষ্ট। এর ফলে কৃষকরা বহু বিক্ষোভ আন্দোলন করেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অনেক কৃষকের মৃত্যুও হয়েছে। শিল্পের কিছু নিজস্ব চাহিদা থাকে, তাই অনাবাদি জমিতে শিল্পস্থাপন করা হলেও, কাঁচামাল সরবরাহ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এই সব কিছুই জড়িয়ে থাকে তার সঙ্গে। কৃষিজীবী মানুষ অনেকসময় শিল্প স্থাপিত হলে শিল্প-শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়। ফলে কৃষি অবহেলিত হয়। তাই শিল্পকারখানা স্থাপনের অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না। এ কথা ঠিক কৃষি কোনো দেশের একমাত্র অবলম্বন হতে পারে না। শিল্পের প্রয়োজনও যথেষ্ট। কিন্তু প্রয়োজন ভারসাম্য। শিল্প যদি দেশের ভবিষ্যৎ হয়, তাহলে কৃষি সেই দেশের ভিত্তি। একটি দেশের অগ্রগতি বা উন্নতি তখনই হবে যখন শিল্প এবং কৃষিকে পাশাপাশি রেখে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
বিজ্ঞান মানুষের জীবনে আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: যুদ্ধোন্মত্ত পৃথিবী, বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা, যুদ্ধের জন্য তৈরি হয় নিত্যনতুন অস্ত্র এইসব কিছু দেখলে মনে হয় বিজ্ঞান মানুষের জীবনে কখনোই আশীর্বাদ নয়। এ যেন এক অভিশাপ। ভয়াবহ শক্তিসম্পন্ন মারণাস্ত্র, অস্ত্রভান্ডার, পরমাণু বোমার শক্তিবৃদ্ধি এই সব কিছুই বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত মানুষ দেশকে ধ্বংস করেছে অবলীলায়। মানুষ তার দীর্ঘশ্রম, ধৈর্যের বিনিময়ে সভ্যসমাজ তৈরি করেছে, বর্বর জীবন থেকে তার প্রবেশ ঘটেছে উন্নত সভ্য জীবনে। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগের ফলে মানুষ তার নিজের তৈরি এই উন্নত সমাজকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। হিরোসিমা-নাগাসাকিতে মানুষের দ্বারা নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমার ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা আজও ভোলা যায় না। উন্নত প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে যে-কোনো দেশ, শহরকে মুহূর্তে শেষ করে দিচ্ছে মানুষ। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষ পরমাণু বোমার ধ্বংসকারী ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করেছে। কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরানের মতন জায়গায় যুদ্ধের যে বীভৎসতার স্মৃতি তা এখনও আমাদের যন্ত্রণা দেয়। শুধুমাত্র পরমাণু বোমা বা যুদ্ধাস্ত্রই নয়, বিজ্ঞান মানুষকে করে তুলেছে যান্ত্রিক। মানুষ নিজের আবেগ, অনুভূতি সব কিছু ভুলে পরিণত হয়েছে যন্ত্রমানবে। মানুষ হয়ে উঠেছে কৃত্রিম। যন্ত্রসভ্যতায় নির্ভর যান্ত্রিক মানুষের মধ্যে যত দিন যাচ্ছে হিংসা, অবিশ্বাস ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের অপরাধমূলক কাজকর্ম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলি ছাড়াও চারিদিকে ছড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের অপব্যবহার। বিজ্ঞানের ভালো দিককে ভুলে মানুষ শুধুই তাকে খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। এত কিছুর পরে বিজ্ঞানকে কোনোভাবেই আমরা মানবজীবনের আশীর্বাদ বলে মনে করতে পারি না।
বিপক্ষে: বর্তমান সভ্যতার আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানের অবদানকে আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক পাও এগোতে পারি না। বিজ্ঞান তার অকৃপণ দানে আমাদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করেছে। কৃষিক্ষেত্রে যে সবুজ বিপ্লব সেটাও সফল হয়েছে বিজ্ঞানসৃষ্ট যন্ত্রের কৃপায়। জীবনদায়ী ওষুধের আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের জন্য। এ ছাড়া বেতার, দূরদর্শন থেকে শুরু করে ইনটারনেট সবক্ষেত্রেই রয়েছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অবদান। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসাব্যবস্থা সবক্ষেত্রে বিজ্ঞান নিয়ে এসেছে অতুলনীয় এক পরিবর্তন। গণমাধ্যমের উন্নতিও সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের জন্যই। বিজ্ঞান আধুনিক মানুষের হাতিয়ার। বিজ্ঞানকে ছাড়া মানুষ একমুহূর্তও তার জীবনকে কল্পনা করতে পারে না। জীবনকে গতিময় করেছে বিজ্ঞান। বৈদ্যুতিক যানবাহন থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা, এই সব কিছুর ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান অনস্বীকার্য। মানবকল্যাণে বিজ্ঞান তার ভান্ডারকে উজাড় করে দিয়েছে। সব কিছুরই ভালো দিক এবং খারাপ দিক দুটোই থাকে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও রয়েছে। বিজ্ঞানকে • তাই ভালো এবং খারাপ উভয়দিকেই মানুষ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানের অপব্যবহারের জন্য দায়ী মানুষ নিজেই। মানুষ নিজের লোভ, হিংসা ও জিঘাংসাকে চরিতার্থ করতে বিজ্ঞানের অপব্যবহার করে। মানবজীবনের ধ্বংসকে মানুষ নিজেই ডেকে আনে।
চলভাষ ছাড়া চলমান জীবন অচল – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: আধুনিক গতিশীল যুগে প্রতি মুহূর্তে মানুষের কাছে চলভাষ বা মোবাইল ফোন অবশ্য প্রয়োজনীয় এক উপাদান-প্রায় ছায়াসঙ্গী বলা যায়। জীবনের প্রতি মুহূর্তেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বা বিশেষ কোনো প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য মোবাইল ফোন অপরিহার্য। অত্যন্ত দ্রুতগতির এই আধুনিক জীবনে সময়ের মূল্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে মোবাইল ফোন ছাড়া চলেই না। কেবল যোগাযোগের মাধ্যমেই নয়-মোবাইল ফোন ইনটারনেট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন তথ্যসম্ভার হাতের মুঠোয় এনে দেয়।
বিপক্ষে: যে-কোনো জিনিসেরই ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও থাকে। সেরকমই চলভাষেরও কিছু মারাত্মক খারাপ দিক আছে। বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনের নেশা যেন মারণব্যাধির মতো ছাত্রসমাজের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। তাদের একাগ্রতা-মনসংযোগ এবং লেখাপড়ার প্রভূত ক্ষতি করেছে এই চলভাষ যন্ত্র। দিন এবং রাতের একটি বিশাল পরিমাণ সময় তাদের কাটে চলভাষ যন্ত্রের সঙ্গে। সারাক্ষণ ফোনে কথা বলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করে। গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা রাস্তা বা রেললাইন পার হওয়ার সময় ফোনে কথা বলা; জীবনে চরম দুর্ঘটনাকে ডেকে আনে। ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা বা রেললাইন পেরোতে গিয়ে মৃত্যুর খবর প্রায় প্রতিদিনই আমরা খবরের কাগজের পাতায় দেখতে পাই। মোবাইল ফোনের নেশা যেন এক সামাজিক ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। চলভাষ যন্ত্রে সারাক্ষণ কথাবার্তা, শব্দ, জোরে গান শোনা এই সব কিছুই মানবশরীরেরও নানান ক্ষতি করে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, চলভাষ যন্ত্রের অত্যধিক ব্যবহার বধিরতা, হার্টের রোগ ও মস্তিষ্কের ক্যানসারের মতন রোগ ডেকে আনে। এখন আমরা দেখি অনেক – ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাও চলভাষ যন্ত্র ব্যবহার করছে। সারাক্ষণ তারা চলভাষ যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত। এত ছোটো বয়স থেকে চলভাষ যন্ত্রের ব্যবহার এ তাদের বিভিন্নরকম ক্ষতি করে। এ ছাড়া এই চলভাষ যন্ত্র বর্তমান যুগের মানুষকে করে তুলেছে অসামাজিক। যে-কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা দেখি একে অন্যের সঙ্গে কথোপকথনের বদলে যে যার নিজের চলভাষ যন্ত্রটি নিয়ে ব্যস্ত। কী আশ্চর্য আত্মকেন্দ্রিক ও অসামাজিক হয়ে পড়ছি আমরা। এভাবেই সমাজবিরোধীদের কার্যকলাপও এই চলভাষ যন্ত্রকে ব্যবহার করে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। চলভাষ যন্ত্রের ব্যবহারকে নেতিবাচকতার চূড়ান্ত জায়গায় আমরা নিজেরাই নিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে যন্ত্র নয়, মানুষই দোষী। তাই নিজেদের স্বার্থেই চলভাষ যন্ত্রের ব্যবহারকে করে তুলতে হবে ইতিবাচক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস-ফেল তুলে দেওয়া উচিত – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে: শিক্ষা মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়। মানুষের বিবেকচেতনারও জাগরণ ঘটায় শিক্ষা। ভারতের মতন দেশে যেখানে মানুষ নিজের কুসংস্কারের বশে নানারকম ভুল কাজ করে সেখানে শিক্ষার প্রয়োজন যথেষ্ট। ভারতের জনসংখ্যার পরিমাণ যথেষ্ট। এক বিশাল শতাংশ ছেলেমেয়েরাই ন্যূনতম শিক্ষার্জনের আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়। কেউ প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে অথবা কেউ অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির মধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার একটা বড়ো কারণ হল শিক্ষাব্যবস্থা আর বিশাল পরিমাণ পাঠক্রমের ভার। শিক্ষার্থীরা এক-একজন এক-এক রকমের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ থেকে আসে। পাঠক্রমের ভার, পরীক্ষার সাংঘাতিক চাপে দিশেহারা হয়ে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। প্রতিযোগিতার মুখে পরে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে আসে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অর্থবান, বড়োলোক ঘরের ছেলেমেয়েরা যেসব সুযোগসুবিধা পায় গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা পায় না। ফলে পরীক্ষায় অনেকসময় গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করতে পারে না। কোনো পরীক্ষায় পাস-ফেল থাকার অর্থই হল শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলা। পাস-ফেলের এই নিয়ম অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই একটি অমানবিক নিয়ম। পাস-ফেল হলে যদি গ্রেড সিস্টেম চালু করা যায় তাহলে সেই ব্যবস্থা আর অমানবিক থাকে না। যদি আমরা শিক্ষার সর্বজনীন বিস্তার চাই তাহলে এই পাস-ফেল প্রথাকে তুলে দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় এই অন্যায় পাস-ফেলের মতন নিয়ম অনেকের পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়।
বিপক্ষে: শিক্ষাকে সকলের অধিকারে রূপান্তরিত করতে হলে পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিতে হবে, এ কথা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিলেই যে পরীক্ষা-ভীতি দূর হয় আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ বেড়ে যায়, এসব কথা যুক্তিহীন-অমূলক। আমরা শিক্ষার গুণগত মান যদি বজায় রাখতে চাই তাহলে পাস-ফেল তুলে দিলে তা বজায় রাখা অসম্ভব। পাস-ফেল তুলে দিলে শিক্ষাব্যবস্থার মান নেমে যাবে। ফলে উচ্চশিক্ষার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে তৈরি হবে শিক্ষার সংকট। এ ছাড়া অন্যদিক থেকে দেখলে, পাস-ফেল না-থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগ্রহ অনেকটা কমে যায়। তারা জেনে যায়, না-পড়লেও সব শ্রেণিতে তারা এমনিই পাস করবে; সে ক্ষেত্রে অনেক ছেলেমেয়েই পড়াশোনা করতে চায় না। তাই পাস-ফেল উঠে গেলে শিক্ষাব্যবস্থা তার কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বই হারিয়ে ফেলবে। বরং পাস-ফেলের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে যে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার সৃষ্টি হয়, তা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর মধ্যে পড়াশোনার – আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। আজও শিক্ষাব্যবস্থায় পাস-ফেলের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কখনোই পাস-ফেল তুলে দেওয়া উচিত নয়।
র্যাগিং কোনো অপরাধ নয়, এটি একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি – প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে সপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো
পক্ষে : র্যাগিংকে আর যাই হোক কোনো অপরাধ বলা চলে না। এটি একটি সামাজিক প্রবৃত্তি। নির্দোষ র্যাগিং বরং সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে জুনিয়ার ছাত্রদের সম্পর্ক ভালো করে। র্যাগিং-এর ফলে সহজভাবে তারা একে অন্যের সঙ্গে মিশতে পারে। এ ছাড়া সদ্য কলেজে প্রবেশ করা ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজভাবে সিনিয়রদের সঙ্গে বন্ধুত্বও করতে পারে। র্যাগিং-এ হাসি-ঠাট্টা, গল্পে অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়। র্যাগিং যে করে, আর যাকে করা হয় – দুজনের মধ্যেই সম্পর্ক ভালো হয়। র্যাগিং কখনোই সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ায় – না। বরং সম্পর্ককে সুস্থ, স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে। এটি একটি নির্মল সুস্থ চিত্ত বিনোদনের উপায়। তাই সুস্থ র্যাগিংকে আমরা কখনোই অপরাধ বলে গণ্য করতে পারি না। কলেজে একটু-আধটু র্যাগিং না-হলে ছেলেমেয়েরা কলেজের পরিবেশের সঙ্গে সহজ হতে পারে না। র্যাগিং সেই অর্থে দেখতে গেলে এক বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করে।
বিপক্ষে : র্যাগিং শব্দটার সঙ্গে কমবেশি সকলেই আমরা পরিচিত। বিশেষত এখনকার ছাত্রছাত্রীরা এই বিষয়টি নিয়ে স্কুল জীবন থেকেই কিছুটা আতঙ্কিত থাকে। কলেজে গিয়ে র্যাগিং-এর ভয় সকলের মধ্যেই কমবেশি কাজ করে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে র্যাগিং শব্দটাই একটা বিভীষিকা। র্যাগিং-এর অনেক ভয়াবহ পরিণাম আমরা চারিদিকের কলেজগুলিতে দেখতে পাই। র্যাগিং-এর কবলে পড়ে মৃত্যুও হয়েছে এমন ঘটনার নজিরও দেখা যায়। গণমাধ্যমগুলি র্যাগিং-এর বীভৎসতাকে লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে এসেছে। কলেজে ঢোকার প্রথম বর্ষেই ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককেই র্যাগিং-এর কবলে পড়তে হয়। র্যাগিং সংক্রামক ব্যাধির মতো পুরো ছাত্রসমাজেই ছড়িয়ে পড়েছে। র্যাগিং অনেক সময়ই হাসি-ঠাট্টার সীমা পেরিয়ে গিয়ে হয়ে ওঠে এক অত্যাচারমূলক খেলা। অনেকসময় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে যায় র্যাগিং। যারা র্যাগিং করে তাদেরকেও হয়তো আগে র্যাগিং-এর কবলে পড়তে হয়েছে, আর সেই আক্রোশ থেকেই তারা অন্যকে র্যাগিং করে। র্যাগিং-এর পিছনে এসব যুক্তি দেওয়া হয়; কিন্তু এগুলি মিথ্যে অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেক ছাত্ররা এই র্যাগিং-এর অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে কলেজ থেকে বেরিয়ে এসেছে- এমন ঘটনাও দেখা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে মারাত্মক কিছু র্যাগিং-এর ঘটনা প্রায় সবসময়ই দেখা যায়। অনেকে হত কিংবা আহত পর্যন্ত হয়েছে এই র্যাগিং-এর জন্য। অনেকে আবার মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকারও হয়েছে র্যাগিং-এর ফলে। যাকে র্যাগ করা হয় তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, নানারকম বদ রসিকতা, আপত্তিকর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অশ্লীল গালিগালাজ ও ক্রিয়াকলাপ করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করাই র্যাগিং-এর মূল লক্ষ্য। এইসব কাজ করে র্যাগাররা নিজেদের হিরো ভাবতে থাকে। র্যাগিং-এর অত্যাচারের ফলে অনেক ছাত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়। র্যাগিং মূলত হৃদয়হীনতার এবং অমানবিকতার এক চরম নিদর্শন। একটা উন্নত ও মানবিক সমাজ তখনই এগিয়ে যেতে পারবে, যখন ছাত্রসমাজ থেকে র্যাগিং শব্দটা মুছে যাবে। নানারকম আইন করা সত্ত্বেও র্যাগিং-এর মতো ব্যাধি থেকে সমাজ পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। যারা র্যাগিং করে ছাত্রসমাজের ক্ষতি করে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাই সকলকে রুখে দাঁড়িয়ে র্যাগিংকে নির্মূল করে সমাজকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের সচেতনতা ও দরদ।
আরও পড়ুন | Link |
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তর | Click Here |