সংবেদনের বৈশিষ্ট্য | সংবেদনের শ্রেণিবিভাগ | শিক্ষায় সংবেদনের তাৎপর্য (Class 11 Exclusive )

সংবেদন হল জ্ঞানের প্রথম সোপান। কোনো ইন্দ্রিয় বা সংগ্রাহক কেন্দ্র উদ্দীপিত হলে সেই উদ্দীপনা সংগ্রাহক কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত অন্তর্বাহী স্নায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছোয় এবং মস্তিষ্কের একটি বিশেষ স্থানকে উত্তেজিত করার ফলে যে চেতনার সৃষ্টি হয়, তাকেই সংবেদন বলে। একটি উদাহরণের সাহায্যে সংবেদনকে আরও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। বস্তু থেকে প্রতিফলিত কোনো আলোকরশ্মি আমাদের চোখের অপটিক স্নায়ুর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কের দর্শন কেন্দ্রে পৌঁছোয়। যার ফলে আমাদের মধ্যে বস্তু সম্পর্কে সংবেদন সৃষ্টি হয় অর্থাৎ বস্তুটিকে আমরা দেখতে পাই।

সংবেদনের বৈশিষ্ট্য | সংবেদনের শ্রেণিবিভাগ | শিক্ষায় সংবেদনের তাৎপর্য
সংবেদনের বৈশিষ্ট্য | সংবেদনের শ্রেণিবিভাগ | শিক্ষায় সংবেদনের তাৎপর্য

(1) চিঁচেনার প্রদত্ত সংজ্ঞা: টিচেনার (Titchener) সংবেদনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, গুণ, তীব্রতা, স্পষ্টতা, স্থিতি-এই চারটি ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক মানসিক ক্রিয়া হল সংবেদন।

(2) সালি প্রদত্ত সংজ্ঞা: মনোবিদ সালি (Sally)-র মতে, কোনো অন্তর্বাহী স্নায়ুর গ্রাহক অংশ উদ্দীপিত হয়ে সেই উদ্দীপনা মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হলে তার দ্বারা যে সহজ মানসিক প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তা-ই হল সংবেদন।

সংবেদনের বৈশিষ্ট্য

জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ যে সংবেদন তা নিয়ে কোনো মতভেদ নেই। তবে সংবেদনকে অন্যান্য আরও অর্থপূর্ণ জানার প্রক্রিয়া যেমন প্রত্যক্ষণ, ধারণা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাই সংবেদনকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে গেলে এর বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা প্রয়োজন।

(1) জানার প্রথম স্তর: 

জানার প্রক্রিয়ার তিনটি স্তরের মধ্যে প্রথম স্তরটি হল সংবেদন। পরবর্তী দুটি স্তর প্রত্যক্ষণ ও ধারণার জন্য সংবেদনের প্রয়োজন।

(2) পাঁচটি উপাদানের সমাহার: 

সংবেদনকে বিশ্লেষণ করলে পাঁচটি উপাদানের অস্তিত্ব দেখা যায়-উদ্দীপক, ইন্দ্রিয় বা গ্রাহক কেন্দ্র, সংজ্ঞাবহ স্নায়ু, স্নায়ুকেন্দ্র এবং প্রতিক্রিয়া।

(3) উদ্দীপকনির্ভর: 

সংবেদন উদ্দীপকনির্ভর। আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো না কোনো উদ্দীপকের সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্রিয়র সংযোগ ঘটলে সংবেদন সৃষ্টি হয়।

(4) ভৌত ঘটনা ও মানসিক মিথস্ক্রিয়ার ফল: 

আলোকতরঙ্গ বা শব্দতরঙ্গ যা সম্পূর্ণ ভৌত ঘটনা তা যখন মানসিক প্রতিক্রিয়া যেমন দেখা বা শোনায় রূপান্তরিত হয় তখন দর্শন বা শ্রবণ সংবেদন সৃষ্ট হয়। তাই বলা যায় যে, সংবেদন হল ভৌত ঘটনা ও মানসিক প্রতিক্রিয়ার মিথস্ক্রিয়ার ফল।

(5) ক্ষণস্থায়ী: 

সংবেদন খুবই ক্ষণস্থায়ী। প্রত্যক্ষণ এবং অনুভূতি সংবেদনের মুহূর্তের মধ্যেই সংবেদনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

(6) পৃথক করা জটিল: 

মনোবিজ্ঞানীরা অন্তর্দর্শন পদ্ধতির দ্বারা বিশুদ্ধ সংবেদনকে পৃথক করার চেষ্টা করেও সফল হননি। সংবেদনের ক্ষণস্থায়িত্ব এর অন্যতম কারণ। সংবেদনকে প্রত্যক্ষণ এবং অনুভূতি থেকে মুক্ত করা খুবই জটিল ব্যাপার।

(7) মনের ন্যূনতম সক্রিয়তা: 

সংবেদনে মন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকে না, খুব কম মাত্রায় হলেও সক্রিয় থাকে। সংবেদনের উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সংবেদন একটি দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়া। এটি জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ। আচরণ বিজ্ঞানে সংবেদনের যথেষ্ট গুরুত্ব থাকায় মনোবিজ্ঞানে ‘সংবেদন বিষয়ক মনোবিদ্যা’ নামে একটি পৃথক অধ্যায় দেখা যায়, সেখানে জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলির ওপর মানসিক প্রক্রিয়ার প্রভাব আলোচনা হয়।

সংবেদনের ধর্ম

সংবেদনের ধর্ম বা লক্ষণকে ভিত্তি করে সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। এই ধর্ম তিনটি দিক থেকে বিচার করা হয়-  গুণগত ধর্ম,  পরিমাণগত ধর্ম এবং স্থানীয় ধর্ম।

গুণগত ধর্ম

মানবদেহে যে বিষয়ের সংবেদন হচ্ছে, তাকে গুণ বলে। যেমন-স্বাদ সংবেদনের গুণ হল যে স্বাদ আমরা পাচ্ছি। শ্রবণ সংবেদনের গুণ হল যে শব্দটি আমরা শুনতে পাচ্ছি। দর্শন সংবেদনের গুণ হল যে আমরা বস্তুটি দেখতে পাচ্ছি।

পরিমাণগত ধর্ম

পরিমাণগত দিক থেকে সংবেদনের পার্থক্য চার প্রকারের হতে পারে। যথা-তীব্রতা, স্পষ্টতা, স্থিতি ও ব্যাপ্তি।

(1) তীব্রতা: 

সমজাতীয় সংবেদনের তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। এই তীব্রতা নির্ভর করে উদ্দীপকের পরিমাণের ওপর (যেমন, 60 ওয়াটের বাল্বের আলোর সংবেদনের তীব্রতা 200 ওয়াটের বাল্বের আলোর তীব্রতার চেয়ে কম)।

(2) স্পষ্টতা: 

সংবেদনের আর-একটি পরিমাণগত ধর্ম হল স্পষ্টতা। কোনো কোনো সংবেদন বেশ স্পষ্ট, আবার কোনো সংবেদনের স্পষ্টতা কম।

(3) স্থিতি: 

সংবেদনের স্থিতি ধর্ম বলতে বোঝায় সংবেদন কত সময়ের জন্য স্থায়ী। কোনো সংবেদন স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, আবার কোনো সংবেদন দীর্ঘস্থায়ী হয়। সংবেদনের এই ধর্মের জন্য আমাদের সময়ের জ্ঞান হয়।

(4) ব্যাপ্তি: 

সংবেদন যতটা জায়গায় ছড়িয়ে থাকে, তাকে সংবেদনের ব্যাপ্তি বলে। ইন্দ্রিয়ের যতটা অংশ উদ্দীপক দ্বারা প্রভাবিত তা-ই হল সংবেদনের ব্যাপ্তি ধর্ম। এটিও সংবেদনের এক ধরনের পরিমাণগত ধর্ম।

স্থানীয় ধর্ম

মানবদেহের বিভিন্ন অংশে পৃথক পৃথক সংবেদন সৃষ্টি হয়। যেমন-কোনো ব্যক্তি চোখ বন্ধ করে বসে থাকলে, পরিচিত কোনো ব্যক্তি তার গায়ে হাত দিলে অনেক সময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকা ব্যক্তি স্পর্শদানকারী ব্যক্তিকে চিনতে পারেন।

সংবেদনের শ্রেণিবিভাগ

সংবেদনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ইন্দ্রিয় সংবেদন,  দৈহিক সংবেদন এবং  পেশিগত সংবেদন।

(1)  ইন্দ্রিয় সংবেদন: 

আমাদের দেহের উপরিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে সংবেদন সৃষ্টি হয়, তাকে ইন্দ্রিয় সংবেদন বলে। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক-এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় থেকে পাঁচ ধরনের সংবেদন সৃষ্টি হয়। এই সংবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- [1] এরূপ সংবেদন বাহ্য উদ্দীপকের সংস্পর্শে উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন উদ্দীপকের জন্য বিভিন্ন ইন্দ্রিয় আছে, যেমন আলোর জন্য চোখ, শব্দের জন্য কান ইত্যাদি। [ii] ইন্দ্রিয় সংবেদনের ফলে বহির্জগতের বিভিন্ন বস্তুর গুণগুলি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান জন্মায়, যেমন আলোর তীব্রতা, রং ইত্যাদি। [iii] এই সংবেদনের মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য থাকায় সংবেদনগুলিকে পৃথক করা সম্ভব।

বিভিন্ন প্রকার ইন্দ্রিয় সংবেদন: ইন্দ্রিয় সংবেদন প্রধানত পাঁচপ্রকার। যথা- [i] দর্শন সংবেদন, [ii] শ্রবণ সংবেদন, [iii] স্বাদ সংবেদন, [iv] ত্বকজাত সংবেদন এবং [v] ঘ্রাণ সংবেদন।

(2) দৈহিক সংবেদন: 

দেহের অভ্যন্তরে কোনো পরিবর্তন ঘটলে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সেই উদ্দীপনার ফলে যে সংবেদন ঘটে, তাকে দৈহিক সংবেদন বলে। ক্ষুধা, তৃয়া, ক্লান্ডি, বেদনা প্রভৃতি দৈহিক সংবেদনের উদাহরণ। দৈহিক সংবেদনের বৈশিষ্ট্য হল- [1] দৈহিক সংবেদন অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক প্রসূত। [ii] দৈহিক সংবেদন জটিল। এর সঙ্গে পেশি, স্নায়ু প্রভৃতি সংবেদন ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে। [iii] দৈহিক সংবেদনের উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। [iv] এই সংবেদনের মাধ্যমে দেহের সুখস্বাছন্দ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। [v] দৈহিক সংবেদন ইন্দ্রিয় সংবেদনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন খিদের সঙ্গে স্বাদ ও গন্ধের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। [vi] দৈহিক সংবেদন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটপতঙ্গের মধ্যেও বর্তমান।

(3) পেশিগত সংবেদন: 

পেশির সংকোচন-প্রসারণের সময় এই প্রকার সংবেদন হয়। দেহের বিভিন্ন পেশি, অস্থিসন্ধি ও টেনডনগুলির মধ্যে যেসব অন্তর্বাহী স্নায়ু থাকে তাদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হলে সেই উদ্দীপনা মস্তিষ্কে বা মেরুদণ্ডে পৌঁছে যে ধরনের সংবেদন সৃষ্টি হয়, তাকে বলে পেশিগত সংবেদন। মানবদেহে তিন ধরনের পেশি সংবেদন দেখা যায়। এগুলি হল-[i] শক্তি প্রয়োগজনিত সংবেদন, [ii] চেষ্টীয় সংবেদন, [iii] পার্শ্বীয় সংবেদন।

শিক্ষায় সংবেদনের তাৎপর্য

সংবেদন হল জানার প্রক্রিয়ার প্রথম সোপান। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জ্যাকস্ ডেলার (Jacques Delor)-এর মতে শিক্ষার চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম স্তম্ভটি হল জ্ঞান অর্জন। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের প্রথম সোপান সংবেদনের গুরুত্ব অপরিসীম। কীভাবে সংবেদন সম্পর্কিত নানাবিধ জ্ঞান আধুনিক শিক্ষার বিভিন্ন নীতি ও ব্যাবহারিক দিকগুলিকে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করা হল।

(1) ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ ও সংবেদন: 

শিশু শিক্ষাবিদ মাদাম মারিয়া মন্ডেসরি (Maria Montessori) শিশুশিক্ষায় ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গুলি তীক্ষ্ণ ও কার্যকরী হয়, যার ফলে সংবেদনের পথ সুগম হয় এবং তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক হয়। ফ্রয়েবেলও (Froebel) তাঁর কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

  • মাদাম মন্ডেসরি (1870-1952): আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিশুশিক্ষাবিদ মাদাম মন্ডেসরি শিশুশিক্ষায় সংবেদনমূলক ইন্দ্রিয়গুলির (Sensory Organs) ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মন্ডেসরি শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ইন্দ্রিয়ের অনুশীলন, কারণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই শিশু বাহ্যিক পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর জন্য তিনি ‘ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটাস’ (Didactic apparatus) বলে কতকগুলি যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি হল বিভিন্ন রঙের ঘনক, বিভিন্ন রঙের প্রিজম, বিভিন্ন আকৃতির পিরামিড, গোলক, শঙ্কু, সিলিন্ডার, বিভিন্ন ওজনের কাঠের টুকরো ইত্যাদি। এইসব উপকরণগুলি নাড়াচাড়ার মধ্য দিয়ে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুর আকৃতি, গঠন, রং প্রভৃতির পার্থক্য নির্ণয় করতে শেখে। ভাষা ও গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রেও এইসব উপকরণ সাহায্য করে।
  • ফ্রেডরিক ফ্রয়েবেল (1782-1852): ফ্রয়েবেল তাঁর কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে ইন্দ্রিয়ের অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও মন্ডেসরির ইন্দ্রিয়ের অনুশীলনের সঙ্গে ফ্রয়েবেলের ইন্দ্রিয়ের অনুশীলনের কিছু পার্থক্য আছে। মন্ডেসরি যেমন ‘ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটাস’-এর সাহায্য নিয়েছেন, ফ্রয়েবেল তেমনই ছোটো শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য কতকগুলি উপহার (gifts) এবং কাজ (occupation)-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। ফ্রয়েবেল প্রবর্তিত কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য উপহারগুলি হল-রঙিন উলের গোলা বা বল, কাঠের তৈরি গোলক, কিউব, সিলিন্ডার ইত্যাদি। এগুলির প্রত্যেকটিই এক একটি বিশেষ ধারণার প্রতীক। যেমন- [1] ‘উলের গোলা’ বা ‘বল’ হচ্ছে আধ্যাত্মিক একতা বা ঈশ্বরের প্রতীক। এগুলির মাধ্যমে ফ্রয়েবেল শিশুদের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন। বলের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে বোঝা এবং জগতের ঐক্যের নিয়ম বোঝা অত্যন্ত সহজ হয়। [ii] গোলকের সঙ্গে তুলনা করে শিশু ‘কিউব’ এবং ‘সিলিন্ডার’-এর আকারের সাদৃশ্য এবং পার্থক্য বুঝতে পারে। যেমন গোলক বা বল গড়ায় কিন্তু ‘কিউব’ গড়াতে পারে না। গোলক বা বলের ক্ষেত্রে 1টি তল কিন্তু কিউবের ক্ষেত্রে 6টি তল। আবার ‘বল’ এবং কিউবের মধ্যে সাদৃশ্যও আছে। উভয়ই কঠিন (solid) পদার্থ। অন্যদিকে ‘সিলিন্ডার’ হল ‘বল’ এবং ‘কিউব’-এর সমন্বয়।

ফ্রয়েবেল পরবর্তীকালে তল (surface), রেখা (line) এবং বিন্দু (point) সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে ধারণা গঠনের উদ্দেশ্যে আরও কয়েকটি ‘উপহার’ আবিষ্কার করেন। ফ্রয়েবেল প্রবর্তিত কাজ (occupation)-গুলি হল-কাদা, কালি, কাঠ, কাঠের গুঁড়ো ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার জিনিস গড়ে তোলা। এগুলির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে শিশুর পরিচয় ঘটে, অন্যদিকে এগুলি নিয়ে কাজ করতে করতে শিশুর হস্তসঞ্চালনের দক্ষতা বাড়ে। নতুন কিছু সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সে আনন্দ উপলব্ধি করে এবং নিজের শক্তি সম্পর্কে সচেতন হতে থাকে। এ ছাড়া সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভেরও সুযোগ পায়।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, মন্ডেসরি এবং ফ্রয়েবেল শিক্ষাপদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুর ইন্দ্রিয়গুলিকে শক্তিশালী ও কার্যকারী করে তোলা যায়। যার ফলে সংবেদনের পথ সুগম হয় যা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক।

(2) শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ও সংবেদন: 

শিক্ষামূলক গবেষণায় শিক্ষাসহায়ক উপকরণের উপযোগিতা সুপ্রমাণিত। এই শিক্ষাসহায়ক উপকরণের উপযোগিতার মূলে আছে বিমূর্ত জ্ঞানকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে তোলা এবং পাঠদানকালে একাধিক সংবেদনকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞান অর্জনকে স্থায়ী ও শক্তিশালী করে তোলা।

(3) সক্রিয়তা ও সংবেদন: 

আধুনিক শিক্ষার অন্যতম নীতি হল সক্রিয়তাভিত্তিক শিখন। ওই নীতিতে বলা হয়েছে শিখনকে ফলপ্রসূ করার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে শিক্ষায় বস্তু সম্পর্কে সংবেদন গ্রহণ করবে।

(4) শিক্ষার্থীর বিকাশ ও সংবেদন: 

আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, সঠিক ও শক্তিশালী সংবেদন শিক্ষার্থীর সার্বিক

বিকাশে সাহায্য করে। ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সংবেদন ইন্দ্রিয়নির্ভর জ্ঞান অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম স্তর সংবেদন যাতে সঠিক হয় সেজন্য সংবেদনের প্রবেশপথ ইন্দ্রিয়গুলির সঠিকভাবে কাজ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুনLink
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ১Click Here
বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা পর্ব ২Click Here
বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ প্রশ্ন উত্তরClick Here

Leave a Comment