একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার দর্শন বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বরের মধ্যে পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা অধ্যায় থেকে মোট 8 নম্বর আসবে। পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা অধ্যায়ের মধ্যে দুটি টপিক আছে। একটি হল নৈতিক প্রত্যয়সমূহ এবং আরেকটি নৈতিক তত্ত্বসমূহ। আজকের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিষ্টার দর্শন পরীক্ষার জন্য নৈতিক প্রত্যয়সমূহ অধ্যায় থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রশ্নে উত্তরসহ তুলে ধরা হল।

নৈতিক প্রত্যয়সমূহ প্রশ্ন উত্তর
Right’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?
‘ঠিক’ বা ‘যথোচিত’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Right”| ইংরেজি ‘Right’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Rectus’ থেকে, যার অর্থ হল Straight বা সোজা। অর্থাৎ যা নিয়ম অনুযায়ী বা বিধিসম্মত। সুতরাং ‘Right’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল যা বিধিসম্মত।
Wrong’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?
‘অনুচিত’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Wrong’। এই ‘Wrong’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Wring’ থেকে, যার অর্থ হল মোচড়ানো। অর্থাৎ যা বিধিসম্মত নয়। সুতরাং ‘Wrong’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল যা বিধিসম্মত নয়।
‘ভালো’ এবং ‘উচিত’ (ঠিক)-এই শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য কী?
নীতিবিজ্ঞানে ‘ভালো’ শব্দটি মূলত উদ্দেশ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। যা পরম ভালো (Absolute Good) যেটি আমাদের কাছে পরমার্থ, আমরা সেটিতে উদ্দেশ্যবাদী নীতিতত্ত্বের দিক থেকে ব্যাখ্যা করি। অপরপক্ষে, ‘যথোচিত’ (Right) শব্দটির দ্বারা যেহেতু বিধি বা নিয়মসম্মত কাজকে বোঝায় সেহেতু এটি নীতি কর্তব্যবাদী নীতিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
‘Good’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ নির্নয় করো।
বাংলায় ‘ভালো’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Good’। জার্মান শব্দ ‘Gut’ থেকে ইংরেজি ‘Good’ শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। এই ‘Gut’ শব্দটির অর্থ হল যা কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। তাই ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘Good’ শব্দের অর্থ হল যা কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে তাই ভালো।
আপেক্ষিক ভালো ও চরম ভালো বলতে কী বোঝায়?
নীতিবিদ্যায় কোনো উদ্দেশ্য লাভের সহায়করূপে যখন ‘ভালো’ কোনো নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে তখন তাকে আপেক্ষিক ভালো (Relative Good) বলা হয়।
অপরপক্ষে, চরম ভালো (Absolute Good) বলতে এমন ‘ভালো’-কে বোঝায় যা স্বয়ং ভালো অর্থাৎ যা স্বতঃমূল্যবান।
নৈতিক বিচার বলতে কী বোঝায়?
নৈতিক বিচার বলতে বোঝায় কোনো কাজের নৈতিক মূল্যায়ন করা। নৈতিক মূল্যায়ন নৈতিক গুণের মাধ্যমে করা হয়। নৈতিক গুণ বলতে বোঝায় ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি। অতএব কোনো কাজের ক্ষেত্রে যখন এই জাতীয় নৈতিক গুণের উল্লেখ করে কাজের প্রকৃতি বর্ণনা করা হয় তখন সেটি হল নৈতিক বিচার।
নৈতিক বিচারের বৈশিষ্ট্য কী?
লিলি তাঁর ‘An Introduction to Ethics’ গ্রন্থে নৈতিক বিচারের চারটি ধর্মের বা বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, কোনো কাজের ভালো-মন্দ বিচারের সময় কাজটির চারটি দিক বিবেচনা করা হয়। এগুলি হল- মূল্য (Value), বাধ্যবাধকতা (Obligatoriness), নৈতিক সংগতি (Moral Fittingness) ও বিষয়গত বৈধতা (Objective Validity) I
নৈতিক বিচারের বিশেষত্ব কী?
নৈতিক বিচারের বিশেষত্ব- নৈতিক বিচার হল কাজের গুণ বিচার। নৈতিক আদর্শের মাপকাঠিতে এই বিচার করা হয়। তাই এটি অনুমানমূলক। নৈতিক বিচারের কোনো নিজস্ব গুণ নেই অর্থাৎ নৈতিক বিচারের কোনো নৈতিক বিচার করা হয় না। নৈতিক বিচার ভালো না মন্দ এই প্রশ্ন তোলা হয় না। কেন-না সেক্ষেত্রে নৈতিক বিচারকে নৈতিক বিচারের বিষয় হতে হয়।
নৈতিক বিচারের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়গুলি কী কী?
নৈতিক বিচারের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়গুলি হল- নৈতিক বিচারের কর্তা অর্থাৎ যে কাজটির বিচার করেছে এবং ভালো-মন্দ বলে রায় দিয়েছে। নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু অর্থাৎ যে বিষয়টির নৈতিক বিচার করা হয়। নৈতিক বিচারের মানদণ্ড অর্থাৎ যে মানদণ্ড অনুসারে নৈতিক বিচার করা হয়। নৈতিক বিচারের বৃত্তি কী? কীসের সাহায্যে নৈতিক বিচার করা হয়?
‘সব ভালো যার শেষ ভালো।’-এ কথা কি সমর্থনযোগ্য?
যেসব নীতিবিজ্ঞানী কাজের ফলাফল দেখে কাজটি ভালো না মন্দ বিচার করেন, তাদের বলা হয় পরিণামবাদী বা ফলাফল সাপেক্ষবাদী। যেমন- মিল ও বেন্থাম প্রমুখ পরিণামবাদী দার্শনিক। তারা মনে করেন কাজের ফল ভালো হলে কাজটি ভালো। কিন্তু যদি অসদুপায়ে বা অসৎ উদ্দেশ্যে কাজটি করা হয় তাহলে সেটিকে ভালো বলা যায় না। তাই ‘সব ভালো যার শেষ ভালো’- এই মত স্বীকার করা যায় না।
নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে ফলাফলের অসুবিধা কী?
সবক্ষেত্রে সুখবাদীদের ফলমুখী নৈতিকতাকে গ্রহণ করা যায় না। যেখানে প্রত্যাশিত ফল লাভ হয় না অর্থাৎ উদ্দেশ্যর সঙ্গে কার্যফলের সংগতি থাকে না। সেখানে কেবল ফলাফলের ভিত্তিতে নৈতিক বিচার সংগত হয় না। উদ্দেশ্যে ভালো হলেও ফলাফল মন্দ হতে পারে আবার উদ্দেশ্য মন্দ হলেও ফলাফল ভালো হতে পারে। তাই নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে ফলাফলের অসুবিধা দেখা যায়।
নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে উদ্দেশ্যের কথা কারা বলেছেন?
বিচারবাদী দার্শনিক কান্ট এবং স্বজ্ঞাবাদী দার্শনিক বাটলার, মার্টিন্যু প্রমুখ ফলাফলের পরিবর্তে স্বেচ্ছাকৃত কর্মের উদ্দেশ্যের কথা বলেন। তাদের মতে কোনো কাজের নৈতিক মূল্য তার ফলাফলের উপর নির্ভর করে না। তাদের মতকে ফলাফল নিরপেক্ষবাদ বলা হয়। উদ্দেশ্য সৎ হলে কাজটি নৈতিক দিক থেকে ভালো হবে এবং উদ্দেশ্য অসৎ হলে কাজটি নৈতিক দিক থেকে মন্দ হবে।
নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে উদ্দেশ্যের প্রতিবন্ধকতা কী?
নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যের প্রতিবন্ধকতা হল তার উপায়। যেমন-পরিবার প্রতিপালনের উদ্দেশ্য সৎ হলেও অপরের সম্পদ চুরি করে পরিবার প্রতিপালন করলে সেটিকে নৈতিক দিক থেকে ভালো বলা যায় না। তাই স্বজ্ঞাবাদীদের বক্তব্য অনুসারে উদ্দেশ্যকে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু বলা হলে অনেক নীতিগর্হিত কাজকে নীতিসম্মতরূপে গ্রহণ করতে হয়।
নৈতিক বিচারের কর্তারূপে ‘আদর্শগত আমি’র কথা কে বলেছেন?
ম্যাকেঞ্জি তাঁর ‘Manual of Ethics’ গ্রন্থে নৈতিক বিচারের কর্তারূপে ‘আদর্শগত আমি’-র কথা বলেছেন। অর্থাৎ তিনি মনে করেন নৈতিক বিচারের কর্তারূপে যে ‘আমি’ আর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় দৈনন্দিন কামনা-বাসনা দ্বারা সম্পৃক্ত ‘আমি’-র মধ্যে পার্থক্য আছে। ‘আদর্শগত আমি’ নৈতিক বিচারের কর্তা হতে পারেন। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাভিত্তিক যে আমি, সেই আমি নৈতিক বিচারের কর্তা হতে পারে না।
নৈতিক বিচারের কর্তা কে?
কোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি অপরের নৈতিক বিচারের কর্তা, আবার তিনি নিজেও নিজের আচরণের বিচার করে থাকেন। ওই ব্যক্তি মন্দ কাজের { জন্য যেমন অনুশোচনা করেন, তেমনি ভালো কাজ করে আনন্দ পান। তাই একদিকে তিনি বিচারকর্তা; অপরদিকে কর্মকর্তাও। অবশ্য ম্যাকেঞ্জি ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন যে-সমস্ত আদর্শের ভিত্তিতে নৈতিক বিচার করা হয় সেই সকল আদর্শই হল নৈতিক বিচারের কর্তা।
নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুতে চরিত্রের কথা কে বলেছেন?
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি-র মতে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু হল ব্যক্তির চরিত্র। তিনি বলেন, যখন কোনো কাজের নৈতিক বিচার করা হয় তখন সেই কাজটিকে ব্যক্তির চরিত্রের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বলে মনে করা হয়। কারণ নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অভিপ্রায়ের মাধ্যমে তার চরিত্র প্রকাশ পায়। অভিপ্রায় চরিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ভালো লোকের অভিপ্রায় স্বভাবতই ভালো এবং মন্দ লোকের অভিপ্রায় স্বভাবতই মন্দ হয়। ফলে ব্যক্তির চরিত্র সম্পর্কে জানা থাকলে তার অভিপ্রায় বোঝা সহজ হয় এবং তার ভিত্তিতে নৈতিক বিচার করা হয়।
নৈতিক বিচারের স্বীকার্য সত্য বা পূর্বস্বীকৃতিগুলি কী কী?
নৈতিক বিচারের পূর্বে আমাদেরকে কতগুলি বিষয় বিনা বিচারে মেনে নিতে হয়। এগুলি হল নৈতিক বিচারের স্বীকার্য সত্য বা পূর্বস্বীকৃতি। ব্যক্তি অভিন্নতা, বিচারশক্তি (ক্ষমতা) এবং ইচ্ছার স্বাধীনতা হল নৈতিক বিচারের মুখ্য স্বীকার্য সত্য আর আত্মার আমরত্ব ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব হল নৈতিক বিচারের গৌণ স্বীকার্য সত্য।
নৈতিক বিচার কি সত্য বা মিথ্যা হতে পারে?
বস্তুনিষ্ঠ অবধারণ সত্য বা মিথ্যা হয়ে থাকে। বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতি থাকলে এই অবধারণ সত্য হয়, সংগতি না থাকলে মিথ্যা হয়। নৈতিক বিচার বর্ণনামূলক নয়। এই অবধারণে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয় না। নৈতিক বিচার আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আচরণের বিচার করে। এই বিচার মূল্য-নিরূপক। কাজেই সত্য বা মিথ্যা হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
ম্যাকেঞ্জির মতে, নৈতিক বিচারের বিষয় কী?
বুদ্ধিবাদীগণ ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানসিক দিককে নৈতিক বিচারের বিষয় বলে মনে করেন। কিন্তু মানসিক দিকের উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় কোন্টি নৈতিক বিচারের বিষয় হবে সে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এই প্রসঙ্গে ম্যাকেঞ্জি বলেন চরিত্র বা ব্যক্তি স্বয়ং হল নৈতিক বিচারের বিষয়।
ঐচ্ছিক ক্লিয়ার বাহ্যবস্তু বা দেহবহির্ভূত স্তরের নৈতিক বিচার কীভাবে সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা আলোচনা করো।
ঐচ্ছিক ক্রিয়ার দেহাতিরিক্ত স্তরের মধ্যে আছে কাজটির প্রত্যাশিত ফল। অর্থাৎ তত্ত্বটি হল ঐচ্ছিক ক্রিয়ার বাহ্যিক ফল দেখে কি ক্রিয়ার ভালো বা মন্দ বিচার করা যায়? এই প্রশ্নে দুটি ভিন্ন মত আছে। নীতিবিদ্যায় যারা সুখবাদী বা উপযোগবাদী দার্শনিক যেমন মিল ও ব্যোম তারা পরিণামবাদী। তারা মনে করেন কাজের ফলাফল বিচার করা যায় কাজের ফল দেখে। যে কাজ সুখের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং দুঃখের পরিমাণ হ্রাস করে সেই কাজের উপযোগিতা বেশি। অর্থাৎ সেই কাজ নৈতিক দিক থেকে বেশি মূল্যবান। অপরপক্ষে, বিচারবাদী কান্ট বলেন কাজের ফল নয় কাজের উদ্দেশ্য দিয়ে আচরণের নৈতিক বিচার করা যায়। সেক্ষেত্রে কাজের উদ্দেশ্য যদি ভালো হয় তাহলে কাজটি নৈতিক দিক থেকে ভালো। কিন্তু কাজটির উদ্দেশ্য মন্দ হলে কাজটিও নৈতিক দিক থেকে মন্দ হয়।
প্লেটো কীভাবে ন্যায়ের সংজ্ঞা দিয়েছেন?
প্লেটো তাঁর ‘Republic’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলেছেন যেখানে তিনটি শ্রেণি থাকবে। যথা- অভিভাবক শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণি ও উৎপাদক শ্রেণি। এই তিনটি শ্রেণির মধ্যে সমন্বয়, সহযোগিতা এবং সম্প্রীতি গড়ে তোলার জন্য একটি নীতির প্রবর্তন প্রয়োজন আর সেই নীতি হল ন্যায়বিচার। অর্থাৎ ন্যায়বিচার হল ভারসাম্য ও সম্প্রীতির প্রতীক যার দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ কর্তব্য, দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকে।
প্লেটোর ন্যায়বিচারের দুটি মুখ্য তত্ত্ব কী কী?
প্লেটোর ন্যায় বিচারের দুটি মুখ্য তত্ত্ব হল- প্রত্যেকের যা প্রাপ্য বা পাওনা তা পেয়ে গেলে ন্যায়বিচার বাস্তবায়িত হয়েছে বলা যেতে পারে (Giving to every man his due)। প্রত্যেকে তার নিজের কাজ করে যাবে যে কাজে সে স্বভাবত দক্ষ, অন্যের কাজে সে হস্তক্ষেপ করবে না (One man should practice one thing only the thing to which his nature is best adopted) I
প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রে কোন্ কোন্ তিনটি শ্রেণির কথা বলেছেন? তাদের নির্দিষ্ট গুণগুলি কী কী?
প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রে যে তিনটি শ্রেণির কথা বলেন। সেগুলি হল- অভিভাবক শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণি ও উৎপাদক শ্রেণি। উৎপাদক শ্রেণি মূলত বশ্যতা ও আনুগত্য স্বীকার করবে। যোদ্ধা শ্রেণির ধর্ম হল সাহসিকতা। প্রজ্ঞা বা জ্ঞান হল অভিভাবক শ্রেণির ধর্ম। ন্যায়পরতা এই সব ধর্মগুলির মধ্যে অন্তরীণ হয়ে থাকে।
প্লেটোর ন্যায়বিচারের ধারণা মূলত কোন্ কোন্ তিনটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত?
প্লেটোর ন্যায়পরতার তত্ত্ব মূলত তিনটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। যথা- কর্মগত বিশেষিকরণ (Functional Specialisation) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার যোগ্যতা ও ক্ষমতা অনুসারে নির্দিষ্ট কর্ম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অনধিকার চর্চা (Non-Interference) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত কাজে মনোনিবেশ করবে। অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও মিতাচার -এই তিনটি গুণ তিনটি শ্রেণির মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকবে।
অ্যারিস্টটলের মতে ন্যায়পরতার সংজ্ঞা দাও?
অ্যারিস্টট্ল ন্যায়পরতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- “মানুষ দক্ষতা অনুসারে তার প্রাপ্য পাবে” (Justice is treating equals equally and unequals unequally)। যেমন- যদি কেউ তার দেশকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাহলে সে তুলনামূলকভাবে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করছে না বা কাপুরুষতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে তার থেকে বেশি সম্মানের অধিকারী হবে।
অ্যারিস্টট্ল বণ্টনভিত্তিক ন্যায়বিচার বলতে কী বুঝিয়েছেন?
অ্যারিস্টটল বন্টনভিত্তিক ন্যায়বিচার বলতে ব্যক্তির যোগ্যতা ও মান অনুসারে সরকারী কার্যালয়ের সমানুপাতিক বণ্টনকে বুঝিয়েছেন। এই ধরনের ন্যায়বিচারে প্রতিটি মানুষের মধ্যে তার প্রাপ্য সম্পদ আনুপাতিক হারে বণ্টিত হয়।
অ্যারিস্টট্ল তাঁর ন্যায়ের তত্ত্বে সদ্গুণবিশিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিয়েছেন কেন?
অ্যারিস্টটল মনে করতেন একমাত্র সদগুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা সমাজকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দিতে পারবে। যেহেতু এই ধরনের মানুষের সংখ্যা অল্প সেহেতু কার্যালয়ের ভার এই অল্পসংখ্যক মানুষদের হাতে সমর্পণ করা উচিত।
অ্যারিস্টট্ল সংশোধনমূলক ন্যায়বিচার বলতে কী বুঝিয়েছেন?
সংশোধনমূলক ন্যায়বিচার হল এমন এক ধরনের ন্যায়পরতা যা মূলত বাণিজ্য সংক্রান্ত কর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই ন্যায়বিচারের লক্ষ্য হল সামাজিক অবিচারের ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি যা হারিয়েছেন তা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রত্যেকের অধিকারের উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা।
অ্যারিস্টট্ল অভিজাত ন্যায়পরতা বা সমন্বয়ের ন্যায়পরতা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
অ্যারিস্টটলের মতে সমন্বয়ের ন্যায়পরতায় একজন আপ্তপুরুষ (Authority) বা উর্দ্ধতন কর্তৃত্ব থাকেন যিনি ন্যায়বিচার বণ্টন করবেন। এ ধরনের ন্যায়বিচার ব্যক্তির মান মর্যাদাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র সমতার উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ন্যায় বিষয়ে নীতিবিদ র্যাচেলের মত লেখো।
অধ্যাপক র্যাচেল মনে করেন যে, ন্যায়ের প্রকৃতি ও স্বরূপ বিচার করতে গিয়ে যেসব অভিমত প্রচারিত হয়েছে সেগুলি ন্যায়ের স্বরূপকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাঁর মতে, সেগুলির বেশিরভাগ আবেগ ও অনুভূতির বশবর্তী হওয়ার কারণে নিরপেক্ষ বিচার করা হয়নি যা র্যাচেলের মতে যুক্তিভিত্তিক নয়। তাই সংস্কৃতিভেদের কারণে ন্যায়ের ধারণার ভিন্নতা দেখা গেছে।
আর্নেস্ট বার্কারের মতে, ন্যায়বিচার ধারণার উৎস বা মূল কী?
আর্নেস্ট বার্কারের মতে, ন্যায় বলতে বোঝায় একটি সুগঠিত ব্যবস্থার মধ্যে মূল্যবোধের সমন্বয়। তিনি ন্যায়বিচার ধারণার মূল আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। ন্যায়-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Justice’, ‘Justice’-শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি ল্যাটিন শব্দ ‘Jestus’ এবং ‘Justicia’ থেকে। এই শব্দগুলির অর্থ হল সংযোগসাধন ও সমন্বয়সাধন।
রল্স ন্যায়বিচার তত্ত্ব বলতে কী বুঝিয়েছেন?
রল্স তাঁর ‘The Theory of Justice’ গ্রন্থে বলেছেন একটি আদর্শ সুসংবদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা (Well Ordered Society) ন্যায়বিচারনির্ভর হবে। এই গ্রন্থে তিনি ন্যায়বিচারের নৈতিক ভিত্তি অন্বেষণ করেছেন। তাঁর মতে ন্যায়বিচার প্রথা এমন নৈতিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত হবে যার সাহায্যে গণতন্ত্রের প্রধান মূল্যবোধ স্বাধীনতা ও সাম্যকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে। ন্যায় বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, অবঞ্চনা ও সমদর্শিতার মনোভাবকে। তাঁর মতে ন্যায়ের লক্ষ্য হল সমাজের সকল মানুষের কল্যাণের পথ প্রশস্ত করা।
Justice as fairness’ বলতে রল্স কী বুঝিয়েছেন?
রল্স ন্যায়বিচারের নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘Justice as Fairness’ -এর উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি প্রথমেই বলেছেন ন্যায়বিচার হল সমদর্শিতা। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কোনো নাগরিক যেন কখনোই তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না হয়। প্রতিটি ব্যক্তিরই নিজের জীবনের শুভ বা মঙ্গল নির্ধারণ করার স্বাধীনতা ও ক্ষমতা আছে।
রল্স আদি অবস্থান বলতে কী বুঝিয়েছেন?
রল্স মনে করেছেন এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি একে অপরের থেকে আলাদা হলেও সকলের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে। তিনি মনে করছেন যে এমন এক অবস্থা আমরা কল্পনা করতে পারি যেখানে সকলেই সমান, যে অবস্থাতে ন্যায়বিচারের নীতিজ্ঞান নির্ধারণ করা সম্ভব। রল্স এই অবস্থার নাম দিয়েছেন আদি অবস্থা।
‘অজ্ঞতার আবরণ বলতে রল্স কী বুঝিয়েছেন?
রল্স আদি অবস্থানের প্রসঙ্গে ‘অজ্ঞতার আবরণ’-এর কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, আদি অবস্থানে ব্যক্তি যদি তার বিশেষ সামাজিক অবস্থান ও বিশেষ পরিচয় যেমন সে ধনী না নির্ধন, হিন্দু না খ্রিস্টান ইত্যাদি ভুলে যায় বা সেগুলি সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকে, তাহলে সকলে সমানরূপে বিবেচিত হবে। সেখানে ন্যায়ের নীতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
Primary Goods’ বলতে রল্স কী বুঝিয়েছেন?
প্রাথমিক অভীষ্ট (Primary Goods) বলতে রল্স প্রত্যেক ব্যক্তির অলঙ্ঘনীয় অধিকার, স্বাধীনতা, আত্মসম্মান অর্জনে সম্পূর্ণ সমভাবে বিবেচিত হওয়ার অধিকার, বৃত্তি নির্বাচন ও লাভ করার অধিকারকে বুঝিয়েছেন।
রল্স কেন উপযোগবাদের নীতি স্বীকার করেননি?
উপযোগবাদের নীতিতে সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক সুখের কথা বলা হয়েছে। রল্স মনে করেন এই নীতিতে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যে ভিন্নতা আছে সেই দিকটি উপেক্ষিত হয়। যেহেতু রল্স ছিলেন একজন উদারনীতিবাদী তাই তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আর এই কারণেই তিনি উপযোগবাদের নীতি স্বীকার করেননি।
স্বাভাবিক ন্যায়বোধ বলতে রল্স কী বুঝিয়েছেন?
প্রত্যেক ব্যক্তির এক নৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকে। রল্স-এর মতে আমাদের ব্যক্তি হিসেবে এক স্বাভাবিক ন্যায়বোধ আছে। আমরা এই স্বাভাবিক ন্যায়বোধ থেকে কোনো কর্মে প্রবৃত্ত হই। মানুষ স্বাভাবিকভাবে দুর্নীতিপরায়ণ নয়। রল্স মানুষের এই স্বাভাবিক ন্যায়বোধের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তিনি মনে করেন ‘Man is not Naturally Corrupt’I
বল্স-এর ন্যায় সংক্রান্ত স্বাধীনতার নীতিটি লেখো?
প্রতিটি ব্যক্তির কতগুলি মৌলিক স্বাধীনতা থাকবে। সমাজের প্রত্যেকের স্বাধীনতা ভোগের বিন্যাসকে যতদূর সম্ভব বাড়ানো হবে। প্রত্যেকে স্বাধীনতা ভোগের অধিকার পাবে। প্রত্যেকে স্বাধীনতা ভোগের ততটুকু অধিকার পাবে যতটুকু অপরের স্বাধীনতা ভোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। রল্স এই স্বাধীনতার নীতিতে দুটি শর্তের কথা বলেন। সেগুলি হল- সেই স্বাধীনতাই স্বীকৃত হবে যখন তা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না। যে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে তা কম স্বাধীনতা ভোগীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
রল্স-এর বিভেদ বা পার্থক্যের নীতিটি কী?
রলসের বিভেদের নীতিটি তাঁর ন্যায়তত্ত্বের দ্বিতীয় মৌলিক নীতি। রল্স এই নীতিতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যের উল্লেখ করেছেন। এই অসাম্য ততদূর পর্যন্ত মেনে নেওয়া হবে, যতদূর পর্যন্ত তা সকলের স্বাধীনতার নীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখবে। রল্স এই বিভেদের নীতিতে দুটি শর্তের কথা বলেছেন। সেগুলি হল- এই নীতি সমাজে সবথেকে অসুবিধা গ্রস্ত এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের উন্নতিতে সহায়তা করবে। সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক পদগুলি অর্জনের ক্ষেত্রে সকলে সমান সুযোগ পাবে এবং যোগ্যতার শর্ত সকলের ক্ষেত্রে সমান হবে।
রবার্ট নজিক কোন্ তিনটি প্রধান উৎসের কথা বলেছেন-যেখান থেকে আমরা যা কিছু প্রয়োজনীয় সংগ্রহ করতে পারি?
রবার্ট নজিক যে তিনটি প্রধান উৎসের কথা বলেছেন যেখান থেকে আমরা যা কিছু প্রয়োজনীয় সংগ্রহ করতে পারি তা হল- প্রতিটি ব্যক্তির তার শরীর, মস্তিষ্ক এবং কোষ ইত্যাদির উপর নিরঙ্কুশ অধিকার আছে। প্রাকৃতিক জগতের ভূমি, জনসম্পদ ও ধাতুর উপর তার অধিকার আছে। কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য যা কিছু মানুষ নিজে তৈরি করে সেগুলির উপর তাদের অধিকার আছে।
প্রাথমিক অধিগ্রহণ বলতে নজিক কী বুঝিয়েছেন?
প্রাথমিক অধিগ্রহণ বলতে নজিক বুঝিয়েছেন, যে পদ্ধতির সাহায্যে ব্যক্তিবিশেষ যখন সর্বপ্রথম কোনো প্রাথমিক সম্পদ যেটির মালিকানা তার নেই সেটির অনুসন্ধান পান এবং সেটিকে অধিগ্রহণ করেন। এখানে দুটি শর্ত থাকে আমি আমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত অধিগ্রহণ করব না। ও অধিগ্রহণ ততটুকু করব যতটুকু অধিগ্রহণ করলে অপরের জন্য অবশিষ্ট থাকে।
স্বেচ্ছা হস্তান্তর বলতে নজিক কী বুঝিয়েছেন?
স্বেচ্ছা হস্তান্তর বলতে নজিক বুঝিয়েছেন, যে নীতিতে বলা হয়েছে অন্যের শ্রমের দ্বারা উৎপন্ন কোনো কিছুর মালিক ব্যক্তি হতে পারে অর্থের বিনিময়ে এবং চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু কখনোই এই হস্তান্তর বলপ্রয়োগ বা প্রতারণার মাধ্যমে হবে না। এই নীতি যে-কোনো সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হয়।
সংশোধন বা Rectification বলতে নজিক কী বুঝিয়েছেন?
রবার্ট নজিক সংশোধন (Rectification) বলতে গিয়ে বলেছেন কখনো কখনো ন্যায়বিচারের জন্য রাষ্ট্র বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক অধিগ্রহণ বা স্বেচ্ছা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি বা দেশ অবৈধ নিয়ন্ত্রণের দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তি বা দেশকে একটি দুষ্প্রাপ্য সম্পদ, যাতে সকল মানুষের অধিকার থাকে (যেমন- জল), সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাহলে ন্যায় রক্ষার জন্য রাষ্ট্র বা কোনো আর্ন্তজাতিক সংস্থা সেক্ষেত্রে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে।
অমর্ত্য সেন কীভাবে রল্স-এর সমালোচনা করেছেন?
অমর্ত্য সেন রল্স-এর সমালোচনায় বলেছিলেন, যথাযথ প্রতিষ্ঠান ও ন্যায়ের নীতির নির্ধারণে অধিক মনোযোগী না হয়ে সমাজে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে, মানুষ বাস্তবে কী জীবন কাটাচ্ছে এগুলির বিচার করা প্রয়োজন।
অমর্ত্য সেন সামাজিক চুক্তির ধারাকে সমর্থন করেননি কেন?
অমর্ত্য সেন মনে করেছেন সামাজিক চুক্তির তত্ত্ব হল একটি কাল্পনিক তত্ত্ব। প্রকৃতির রাজ্য কীরকম ছিল, কীভাবে চুক্তি সম্পাদিত হল ইত্যাদি আমাদের কল্পনানির্ভর। ন্যায্যতার তত্ত্বকে তিনি বাস্তব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই কারণে অমর্ত্য সেন সামাজিক চুক্তির ধারাকে সমর্থন করেননি।
আরও জানতে ক্লিক করুন – www.wbclass.in
আরও পড়ুন | Link |
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর | Click Here |
আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর | Click Here |